বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ ” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ রচনা || Bigyan Ashirbad Na Abhishap Class-10
বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ
"সভ্যতা ধরেছে আগেই বিজ্ঞানের হাত।
রাত তাই দিন হল, দিন হল রাত।"
আধুনিককালে বিজ্ঞানের ভূমিকা :
"বিজ্ঞানমুচ্ছিষ্টম্ ইদম্ জগৎ” অর্থাৎ বিজ্ঞানের দ্বারা এ জগৎ উচ্ছিষ্ট। সভ্যতা যদি হয় যন্ত্র, তবে বিজ্ঞান সেখানে যন্ত্রী। কিন্তু, বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও সভ্যতার কপালে দুশ্চিন্তার কলঙ্করেখা। বিজ্ঞানের জয়যাত্রার মাঝে একদিকে সৃজন অন্যদিকে ধ্বংস। বিজ্ঞানের মারণযজ্ঞে ত্রস্ত মানুষ তাই প্রশ্ন তুলেছে-'বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ?'
বিজ্ঞান : কাল থেকে কালান্তরে :
মানুষ যেদিন আগুন জ্বালতে শিখল, প্রকৃত অর্থে, সেদিনই সভ্যতার প্রদীপ জ্বলল। সভ্যতার ক্রমবিকাশে দেখা দিল নব নব বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার। মানুষ নিজের প্রয়োজনে সৃষ্টি করে। বিজ্ঞানকে নিজের প্রয়োজনে কাজে লাগিয়ে, নিজ উদ্দেশ্যসাধন করছে মানুষ। বিজ্ঞান এই অর্থে মূলত মানবকল্যাণমুখী। বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান মানুষ আজ পৃথিবীর সমস্ত অজ্ঞাত কুসংস্কার ও জড়তা কাটিয়ে উঠেছে। জীবনে এসেছে তাদের অফুরন্ত কর্মশক্তি, অপর্যাপ্ত গতিছন্দ। বিজ্ঞান আজ ঊষর মরুকে করেছে জলসিক্ত উর্বর, ঊষর পৃথিবীকে করেছে শস্যশালিনী। 'নবীন জগৎ সন্ধানে' আজ মানুষ চলছে 'ছুটে মেরু-অভিযানে।'
বিজ্ঞান বনাম মানুষ :
জীবনের নানা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান আমাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে। রবীন্দ্রনাথ ও মহাত্মা গান্ধি অতিযান্ত্রিকতার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। 'বিজ্ঞান মানুষকে দিয়েছে বেগ, কেড়ে নিয়েছে আবেগ।' অতিরিক্ত বিজ্ঞান-নির্ভরতা মানুষকে পঙ্গু করেছে। যন্ত্র সভ্যতায় মানুষ আজ যন্ত্রতুল্য। মানুষ তার মনুষ্যত্ব হারাতে বসেছে।
বিজ্ঞানের অশুভ দিক :
'বাঘ বাঘকে খায় না', কিন্তু বর্তমান যান্ত্রিক সভ্যতায় পাশবিকতা রয়েছে, যে বিজ্ঞান নিয়ত মানুষের কল্যাণকর্মে রত, সেই বিজ্ঞানকেই মানুষ কাজে লাগিয়েছে এই সুন্দর সৃষ্টিকে ধ্বংসের কাজে। খাদ্যে ও ওষুধে ভেজাল, মারণাস্ত্রের আবিষ্কার, নিত্যনতুন অশুভ আণবিক শক্তির উদ্ভাবনে মানুষ এখন এত পরিপক্ব যে, একটি ছোট্ট বোতাম টিপলেই মুহূর্তে পৃথিবীর একটি বৃহত্তম অংশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে। হিরোসিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার যে বিষময় পরিণত, তা আজও বিশ্ববাসী ভুলতে পারেনি। আজকের সন্ত্রাসবাদও বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করেছে।
বিজ্ঞান ও ধবংস :
যে বিজ্ঞান জীবনদায়ী ওষুধ ও যন্ত্রপাতি আবিষ্কার করে মানুষকে নবজীবন দান করেছে, সেই বিজ্ঞানী আবার মারণাস্ত্র আবিষ্কার করে জীবনকে ধ্বংসের কাজে ব্যাপৃত থাকছে। এর প্রভাবে পৃথিবীর বায়ু, জল, মৃত্তিকা আজ দুষিত।
মঞ্জাল ও শুভবুদ্ধি :
বিজ্ঞানের ধ্বংসলীলার জন্য বিজ্ঞান দায়ী নয়, দায়ী মানুষ। বিজ্ঞান যদি মানুষের শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়, তাহলে বিজ্ঞান কেবলমাত্র মানবকল্যাণী রূপে মানুষের ভৃত্য হয়েই থাকবে। আইনস্টাইন বলেছেন, "Religion without science is lame, science without religion is dead." তাই, শুভবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত বিজ্ঞান মানবকল্যাণে ব্রতী হয়ে আশীর্বাদ রূপে দেখা দেবে। বর্তমান সভ্যতার যে অগ্রগতি তা তো বিজ্ঞানেরই দান। সুতরাং শুভবুদ্ধি দ্বারা চালিত বিজ্ঞান মানুষের সমাজ সভ্যতার ক্ষেত্রে কল্যাণের বার্তাই বয়ে আনে, সে কথা আজ প্রমাণিত সত্য।
উপসংহার :
মানুষ যদি মানুষ হয়, বিজ্ঞানকে যদি মানবকল্যাণে প্রয়োগ করতে পারে, তাহলে বিজ্ঞান হবে আশীর্বাদ। আর যদি অমানু হয়ে বিজ্ঞানকে ধ্বংসের কাজে প্রয়োগ করে, তাহলে বিজ্ঞান হয়ে উঠবে অভিশাপ। এজন্য জনৈক কবি বিজ্ঞানের হয়ে দুঃখ করে বলেছেন-
"বিজ্ঞান বলে দোষ কি আমার
কেন মিছে দাও গালি।
প্রয়োগের গুণে সুন্দর মুখে
তোমরা মাখাও কালি।"
আরও পড়ুন-