বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল ” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Bigyaner Suphol O Kuphol
বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল
ভূমিকা :
মানুষ আজ একবিংশ শতাব্দীতে পা রেখেছে। বিজ্ঞানের রথে চড়েই তার এই বিজয় যাত্রা, কৌতূহলী মানুষের মন আবিষ্কার করে ফেলেছে জীবন ও জগতের নানা গোপন রহস্য। সে আজ জেনে গেছে বিভিন্ন প্রাকৃতিক নিয়ম, নিয়মের ফল। তার অমিত শক্তির সীমাহীন বিস্তারের কথাও সে আজ জেনে গেছে। শুধু তাই নয়, সে আজ এ কথাও বুঝেছে তার অসীম শক্তির - মধ্যেই লুকিয়ে আছে ধ্বংসের বীজ। ধ্বংসের এই বীজতলা তৈরি হয়েছে মানুষের বৈজ্ঞানিক সাফল্যের মাটিতেই। তাই মানুষ আজ যেমন গর্বিত তেমনি মানুষ আজ শঙ্কিতও বটে।
মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞান :
একদিন অবাক বিস্ময়ে পৃথিবীর প্রথম মানুষ সূর্য ওঠা দেখেছিল। ঝড়, তুফান, বিদ্যুতের আকস্মিক ঝলকানির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে একদিন সে আতঙ্কিত হয়েছিল। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তির ভয়ংকর রূপ দেখে মানুষ সেদিন স্তম্ভিত হয়েছিল। ভয়ে আর আতঙ্কে সেই প্রাকৃতিক শক্তিকে তাই তারা পুজো করতে শুরু করেছিল। এরপর একদিন আগুন আবিষ্কার হল। মানুষ জেনে ফেলল জল-স্থলের রহস্য। সরে গেল অন্তরীক্ষের যবনিকা। যুক্তি আর বুদ্ধি দিয়ে সে বিচার করে নিল বিশ্বব্রহ্মান্ডের সমস্ত কার্যকারণ সম্পর্ক। আর তারপর থেকেই মানুষ জানতে শুরু করল নানা রোগ-ব্যাধির কারণ। অকালমৃত্যু, মহামারি কমে এল। শস্যশ্যামলা হয়ে উঠল বসুন্ধরা। কারখানার সাইরেন জানিয়ে দিল বিশ্ববাসী আজ কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ছে। দূরদূরান্তের এমনকি মহাকাশের নানা সংকেতও পৌঁছে দিয়েছে বিজ্ঞান। মানবসভ্যতার চালকের আসনে ধীরে ধীরে উঠে এল বিজ্ঞান। মানুষকে করে তুলল অনেকটাই কর্মহীন। আর এখান থেকেই দেখতে শুরু করলাম বিজ্ঞানের বিপরীতে অন্য এক ছবি।
বিজ্ঞানের কুফল :
মানুষ আজ বিজ্ঞানের হাত ধরে ক্রমশই যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞান মানুষের জীবনে যে স্বাচ্ছন্দ্য এনে দিয়েছে তা আমাদের ক্রমশই করে তুলেছে পরমুখাপেক্ষী। আমরা ক্রমশই আরামপ্রিয়, কর্মবিমুখ হয়ে পড়ছি। অন্যদিকে বিজ্ঞানের হাত ধরে সমাজে কর্মসংস্থানও ক্রমশই সংকুচিত হয়ে পড়ছে, কাজ হারাচ্ছে মানুষ। অন্যদিকে পৃথিবীতে জনসংখ্যা ক্রমশই বেড়ে চলেছে, ফলে সমাজে বেকারত্ব বাড়ছে। বিজ্ঞানকে হাতিয়ার করে মানুষ লাভের অঙ্ক বাড়াতে পারে বলেই কর্মসংস্থানের সুযোগ ক্রমে কমে যাচ্ছে। এরই পাশাপাশি বিজ্ঞানের অতিরিক্ত ব্যবহারে পরিবেশগত ভারসাম্যও নষ্ট হচ্ছে। শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, জলদূষণের ফলে পৃথিবীতে রোগব্যাধি বাড়ছে। বহু প্রজাতিসহ পশুপাখিও আজ ধ্বংসের প্রহর গুনছে। মারণাস্ত্রে ভরে গেছে নানা দেশের অস্ত্রভান্ডার। পরমাণু বোমা তো আছেই, তা ছাড়া জীবাণু বোমার আতঙ্কেও মানুষ আজ মানব প্রজাতি ধ্বংসের আতঙ্ক বুকে নিয়ে প্রহর গুনছে।
উপসংহার :
অমিত শক্তিধর মানুষ বিজ্ঞানের হাত ধরেই সাধনায় সিদ্ধি পেয়েছে। এই শক্তিসাধনার ফলশ্রুতিতে মানবজীবনে জমেছে যান্ত্রিকতা। তার মনের সুকুমার বৃত্তিগুলি আজ ধ্বংসের পথে। অথচ বিজ্ঞান মানবজীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছে, তাকে অস্বীকার করার ক্ষমতাও আজ আর মানুষের নেই। তাই বিজ্ঞানের কল্যাণী মূর্তির পাশাপাশি ধ্বংসের ছবিও আমরা আজ লক্ষ করি। কোন্ মূর্তিতে সে মানুষের জীবনে দেখা দেবে তা মানুষকেই ঠিক করে নিতে হবে।
আরও পড়ুন-