সুনামি বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “সুনামি” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
সুনামি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Class-10 Bangla prabandha Rachana
সুনামি
"বিজ্ঞানে অজ্ঞান ওরে করে যাস্ ভুল,
প্রকৃতি রহস্যময়ী, নাহি তার কুল।
ভাঙা গড়া তার খেলা, স্থিতি লয় তার লীলা।
মানুষ তাহার হাতে খেলার পুতুল।”
ভূমিকা :
বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান আমরা পৃথিবীর মানুষ সভ্যতার দর্পে বলে চলেছি 'প্রকৃতি আমাদের করায়ত্ত ও বশীভূত', কিন্তু এ ধারণা সর্বাংশে সত্য নয়। প্রকৃতির রুদ্র রোষ, ভ্রুকুটিকুটিল নয়নের লেলিহান শিখা যে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা সৃষ্টি করে, তাতে বিজ্ঞানবাদী সভ্য মানুষ বড়োই অসহায়। তার উজ্জ্বল প্রমাণ ২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর। সমুদ্রদানব রূপে সুনামির অতর্কিত আবির্ভাব ভারত তথা পৃথিবীর মানুষকে চমকে দিল।
সুনামির আবির্ভার :
সেদিন ছিল রবিবারের ছুটির সকাল। বিগত রাতের বড়োদিনের আনন্দ-উৎসবের রেশ তখনও কাটেনি। বাইরে পৃথিবীতে প্রাত্যহিক কর্মজীবনের ছন্দ আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক। সহসা সুনামির আবির্ভাব। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সব।
এর নিট ফল হল, ভারত মহাসাগরের উপকূল সীমানায় অবস্থিত তেরোটি দেশের প্রভূত ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে দু'লক্ষ বত্রিশ হাজার মানুষের মৃত্যু অথবা চিরতরে হারিয়ে যাওয়া, উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ভৌগোলিক পরিবর্তন এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদের বিনাশ।
সুনামি কী?
প্রশ্ন হল 'সুনামি' আসলে কী? 'সুনামি' (Tsunami) শব্দটি হল জাপানি, এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ লম্বা। 'বন্দরের জলোচ্ছ্বাস'কে জাপানিরা এই ছোট্ট শব্দটি দিয়েই বুঝিয়ে থাকে। সুনামির ভয়ংকর এই ঢেউয়ের জনক হল সমুদ্রতলে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প।
সুনামির কারণ :
ভূপৃষ্ঠ কয়েকটি খণ্ড খণ্ড 'টেকটনিক প্লেটের' ওপর গড়ে উঠেছে। এই টেকটনিক প্লেটগুলো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের নীচের ম্যাগমা স্তরের ওপর অতি ধীর গতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। মাঝে মাঝে ওই প্লেটগুলো একটির ওপর আর একটি উঠে গিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এর নিট ফল হল ভূমিকম্প। সাগরতলে এই ধরনের ভূমিকম্প থেকেই সুনামির উৎপত্তি হয়।
সুনামির প্রভাব :
২০০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশে অবস্থিত ভারতীয় প্লেটটি বর্মা প্লেটের ওপর হঠাৎ পিছলে ঢুকে যাওয়ায় ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের প্রায় ৪০ কিলোমিটার নীচে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়, রিখটার স্কেলের এই ভূমিকম্পের মান ছিল ৮.৯। এই ভূমিকম্প থেকে যে বিপুল শক্তি উৎপন্ন হয় তার পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ কোটি টন 'ট্রাই-নাইট্রো-টলুইন' শক্তির সমপরিমাণ বিস্ফোরণের সমান শক্তিসম্পন্ন।
সমুদ্রতলে উৎপন্ন এই বিপুল পরিমাণ শক্তি সমুদ্রগর্ভের নীচের স্তরের জলকে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার গতিতে ওপরে ঠেলে পাঠায়। এরপর বিশাল বিশাল সামুদ্রিক ঢেউ পাড়ি জমায় উপকূলের দিকে। এই সুনামির ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের অনেক ছোটোখাটো দ্বীপ সমুদ্রের জলের তলায় তলিয়ে যায়। সেই সঙ্গে ভারতের উপকূলভাগ ও আন্দামান-নিকোবরের নিম্নাঞ্চল জলে তলিয়ে যায়। সুনামির ফলে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার বহু বাড়ি-ঘর ও কৃষিজমি জলের তলায় চলে গেছে। বহু মৎস্যজীবীর নৌকা জলে ভেসে গেছে।
ভৌগোলিক ক্ষয়ক্ষতি :
সুনামির ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মোট তেরোটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও ভারতের দক্ষিণ উপকূলের অবস্থা ছিল সবচেয়ে শোচনীয়। ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, তামিলনাড়ু, পন্ডিচেরী ও অন্ধ্রের উপকূলভাগের ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। পরবর্তী সময়ে একমুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ভারত সরকারও ত্রাণসামগ্রী নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে সুনামির পড়ে।
পৃথিবীর বিজ্ঞানবাদী মানুষের কাছে সুনামি প্রমাণ করেছে প্রকৃতির কাছে এখনও আমরা কত অসহায়। সুনামি সতর্কীকরণ ব্যবস্থা চালু করতে পারলে কিছুটা বিপদ কমবে বলে মনে হয়।
উপসংহার :
"এক চোখে যার খরার আগুন,
আর এক চোখে বন্যা,
সেই প্রকৃতি বিশ্বমাতার-
হাসির সুরে কান্না।"
সেই কান্না থামাতে ঈশ্বরের কাছে সমবেত প্রার্থনা ছাড়া আর কী উপায়?
আরও পড়ুন-