মঙ্গল অভিযানে ভারত বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “মঙ্গল অভিযানে ভারত” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
মঙ্গল অভিযানে ভারত বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Class-12 Bengali Bengali Grammar
মঙ্গল অভিযানে ভারত
ভূমিকা :
উন্নয়নশীল রাষ্ট্র ভারতের বহুসংখ্যক মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাস করে, এ কথা সত্য। কিন্তু আর্থিকভাবে দরিদ্র হলেও এ-দেশ মেধায় দরিদ্র নয়। তাই বিজ্ঞানের সাধনায় ভারত চিরকাল স্বল্প পুঁজিকে সম্বল করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। বিশেষত মহাকাশ গবেষণার মতো ব্যয়বহুল ক্ষেত্রেও কেবল প্রযুক্তির জোরে কম খরচে ভারত তার মঙ্গল অভিযানের স্বপ্নকে সফল করে তুলেছে। উচ্চাশার সঙ্গে আত্মবিশ্বাস এবং লক্ষ্যপূরণের ইচ্ছার সঙ্গে যথার্থ পরিকল্পনার সার্থক মেলবন্ধন ঘটলে অসাধ্য সাধন হয়, ভারতের মঙ্গল অভিযান তারই উজ্জ্বল উদাহরণ।
মঙ্গল যাত্রার ইতিহার :
এখনও পর্যন্ত আমেরিকা ২৩ বার মঙ্গল অভিযান করে সাফল্য পেয়েছে ১৬ বার। রাশিয়ার ১৭ বারের অভিযানে সাফল্য এসেছে মাত্র ৫ বার। ইউরোপ মোট ৩ বার অভিযান করে সাফল্য পেয়েছে ২ বার। চিন ও জাপান ১ বার করে অভিযান করলেও কোনো সাফল্য পায়নি। সেখানে ভারত ১ বার অভিযান করেই সাফল্য অর্জন করেছে।
ভারতের মঙ্গল অভিযান :
২০১৩ সালে ৫ নভেম্বর অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা ফার্স্ট লঞ্চ প্যাড থেকে ইসরো পি এস এল ভি সি-২৫ রকেটে ভারতের মার্স অরবিটার মিশন মঙ্গল যাত্রা শুরু করে। ৭ নভেম্বর পৃথিবীর অভিকর্ষ কাটাতে প্রথমবার ল্যাম ফায়ারিং করা হয়, এরপর ৮, ৯, ১১, ১২ এবং ১৬ নভেম্বর যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং ষষ্ঠ ল্যাম ফায়ারিং করা হয়। ১ ডিসেম্বর পৃথিবীর কক্ষপথ থেকে মার্স অরবিটর মিশন মঙ্গলের দিকে রওনা দেয়। এরপর ৪ ডিসেম্বর ৯.২৫ লক্ষ কিলোমিটার ব্যাসার্ধে ক্রিয়াশীল অভিকর্ষের টান অতিক্রম করে পাকাপাকি মঙ্গলের দিকে যাত্রা করে। ১১ ডিসেম্বর ল্যাম ফায়ারিং করে মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশ্যে ধাবমান মঙ্গলযানের গতিপথে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হয়। ১১ জুন দ্বিতীয়বার মঙ্গলযানের গতিপথের বদল ঘটানো হয়।
২২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলযানটি মঙ্গল গ্রহের অভিকর্ষজ এলাকায় ঢুকে পড়ে। ওখানে ৩০০ দিন সুপ্ত থাকার পর ৪৪০ নিউটন লিক্যুইড অ্যাপোজি মোটর (ল্যাম) টেস্ট করা হয় এবং শেষবারের মতো গতিপথে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা হয়। আসলে মঙ্গলগ্রহের কক্ষপথে 'মার্স অরবিটার'কে প্রবেশ ও স্থাপন করানোর ব্যাপারটা মোটেই সহজ কাজ নয়। মহাকাশ স্টেশন থেকে সংকেত পাঠিয়ে অত্যন্ত নিপুণতার সঙ্গে এই কাজটি করা হয়। অবশেষে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর বুধবার ভারতীয় সময় সকাল ৮টা ৪ মিনিটে সমস্ত উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে লালগ্রহের কক্ষপথে মঙ্গলযানটি ঢুকে পড়ে। ভারতই একমাত্র দেশ যে প্রথম প্রচেষ্টায় মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করল।
ভারতের মঙ্গল সাফল্যের কান্ডারিরা :
ভারতের মঙ্গল অভিযানের প্রধান হলেন ইসরোর চেয়ারম্যান কে রাধাকৃয়ন। মঙ্গল যানের গতিবিধি ঠিক করতেন প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মিলস্বামী আন্নাদুরাই। পি. এস. এল. ভি-র প্রোজেক্ট ডিরেক্টর পি. কুন্নিকৃষ্ণন মাটি থেকে মঙ্গলযান আকাশে পৌঁছানোর দায়িত্বে ছিলেন। মঙ্গলযানের তিনটি সন্ধানী যন্ত্র তৈরির পুরোভাগে ছিলেন এ. এস. কিরণ কুমার। আর এইভাবে যে মঙ্গল অভিযান সম্ভব, সে বিষয়ে প্রথম থেকেই পথ দেখিয়েছিলেন ভি. আদিমূর্তি। ভারতীয় বিজ্ঞানীরা মাত্র ১৫ মাসে ৭ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার খরচ করে মার্স অরবিটার মিশন মঙ্গলযানটি তৈরি করেন, সেখানে আমেরিকার মার্স মাভেন মঙ্গলযান তৈরি করতে ৬৭ কোটি ১০ লক্ষ ডলার খরচ হয় এবং ৫ বছর সময় লাগে। আমেরিকার নাসার মতো উন্নত রকেট ভারতে নেই। কেবলমাত্র প্রযুক্তির জোরেই মঙ্গল অভিযান সফল হয়েছে।
উপসংহার :
চিন বা জাপানের মতো উন্নত দেশ যা পারেনি, বহু অর্থ খরচ করেও আমেরিকা একবারে যা করে দেখাতে পারেনি, ভারত খুব অল্প খরচ করেই তা করে দেখিয়েছে। ভারতের পক্ষে মহাকাশ অভিযানে আজও বহু বাধা-বিঘ্ন রয়েছে। আজও এদেশ আর্থিকভাবে স্বনির্ভর নয়। কিন্তু ভারতের ইসরোর বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যপূরণের দৃঢ়তায় শুধু প্রযুক্তির জোরে একটা হলিউড ছবির থেকে কম খরচে মঙ্গল অভিযানে সাফল্য এসেছে। যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল ঘটনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য, "সারা দুনিয়ায় ৫১টি অভিযানের চেষ্টার মধ্যে মাত্র ২১টি সফল হয়েছে। কিন্তু আমরা পেরেছি।” এই মঙ্গল অভিযান ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নবদিগন্ত সূচিত করবে।
আরও পড়ুন-