একটি ভয়াবহ রোগ-ডেঙ্গি বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “একটি ভয়াবহ রোগ-ডেঙ্গি ” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি ভয়াবহ রোগ-ডেঙ্গি বাংলা রচনা || Dengue Rog Bangla Rachana
একটি ভয়াবহ রোগ-ডেঙ্গি
ভূমিকা :
একটি মশা কামড়ালেও যে একজন মানুষের মৃত্যু হতে পারে, আধুনিক যুগে তা ভাবলেও শিহরিত হতে হয়। তবে এমনই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা সম্প্রতি ঘটে চলেছে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের অনেক জায়গাতেই। ডেঙ্গির প্রকোপে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। শহর তথা গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গি হয়ে উঠেছে আতঙ্কের বস্তু, এখন সামান্য জ্বর হলেও মানুষ ডেঙ্গির ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। প্রধানত পরিবেশের অপরিচ্ছন্নতাই এই রোগ বৃদ্ধির মূল কারণ। এডিস-ইজিপ্টি মশার দংশনে ডেঙ্গির সংক্রমণ ঘটে। ম্যালেরিয়ার মতো এটিও একটি মশকবাহিত রোগ।
প্রধানত দিনের বেলাতেই এই জাতীয় মশা ঘোরাফেরা করে। সাধারণত ঘরের অন্ধকার কোণে এডিস-ইজিপ্টি মশা বসবাস করে। এদের ৬টি পায়ে সাদা বিন্দু থাকে এবং মাথায় ও পিঠে সাদা উল্কির মতো দাগ দেখতে পাওয়া যায়। যতদিন এই মশার আয়ু থাকে ততদিনই তারা এই রোগের সংক্রমণ ঘটাতে পারে। বাড়ির মধ্যে বা আশপাশে জমে থাকা জলে এই প্রকার মশারা ডিম পাড়ে। ডেঙ্গি রোগের চারপ্রকার ভাইরাস আছে যারা এই রোগের সংক্রমণ ঘটায়। এরা হল-ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ এবং ডেন-৪। এই চার রকম ভাইরাসের মধ্যে ডেন-২ ও ডেন-৪ হল অত্যন্ত মারাত্মক, কারণ এই দুটি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর রক্তক্ষরণ ঘটে থাকে।
রোগের লক্ষণ :
ডেঙ্গির প্রাথমিক লক্ষণ হল হঠাৎ ১০২° থেকে ১০৩° পর্যন্ত দেহের উত্তাপ বেড়ে যাওয়া। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এই উত্তাপ আরও বেশি হয়। সাধারণত 'ইনফ্লুয়েঞ্জা'-র সময় যেমন শরীরে ব্যথা হয়, তার থেকেও অনেক বেশি ব্যথা হয় দেহের সর্বাঙ্গে, প্রধানত হাড়ে ও গাঁটে। ডেঙ্গির ফলে রোগীর রক্তে প্লেটলেট সংখ্যা অত্যন্ত দ্রুত কমে যায়। এ ছাড়া অন্যান্য যেসব উপসর্গ দেখা যায় সেগুলি হল-শরীরের প্রায় সমস্ত জায়গায় কালো দাগ, শরীরের নানা স্থান বিশেষত মাড়ি ওচামড়া ফেটে এবং প্রস্রাব ও মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া।
যেসব ডেঙ্গি রোগীর দেহে এই ধরনের রক্তক্ষরণ বৃদ্ধি পায় তাদের অবস্থা মারাত্মক বলে আশঙ্কা করা হয়। এ ছাড়া বমি ও নানারকম অস্বস্তি বোধ হতে থাকে এবং খিদের বোধ একেবারেই থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই রোগ লিভারকেও আক্রমণ করে ও তাতে রোগীর লিভারে খুব যন্ত্রণা হয়। তাই দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না হলে শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে এবং শেষপর্যন্ত রোগী মারাও যেতে পারে। তবে উপযুক্ত চিকিৎসা হলে রোগীর তাতে কোনো মৃত্যু আশঙ্কা থাকে না।
আক্রান্তের চিকিৎসা :
পূর্বে বর্ণিত লক্ষণগুলি দেখা দিলেই রোগীর রক্ত পরীক্ষা করিয়ে রোগীর ডেঙ্গি রোগ হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করতে হবে। রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি প্রমাণিত হলে সঙ্গে সঙ্গে রোগীর বাড়ির লোকের চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে। ডেঙ্গি আক্রান্ত ব্যক্তির জ্বর ওঠানামার সূচি তৈরি করতে, যথেষ্ট পরিমাণে তাকে জল ও তরল খাদ্য খাওয়াতে হবে এবং রোগীর লক্ষণগুলিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে তা চিকিৎসককে জানাতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে চলার পরও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হলে তাকে হাসপাতালে ভরতি করতে হবে।
এই রোগ হলে অবশ্যই তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে হবে, কিন্তু ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য সবথেকে বেশি যা দরকার তা হল এই রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা করা। যেহেতু ডেঙ্গি রোগটি মশকবাহিত তাই মশার জন্ম ঠেকাতে হবে। যেহেতু ডেঙ্গির মশা দিনের বেলা কামড়াবার সম্ভাবনা বেশি, তাই দিনের আলোয় মশার থেকে সতর্ক থাকতে হবে। তাই আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত দিনে বা রাতে ঘুমাবার সময় মশারি ব্যবহার করা।
আমাদের বসবাসস্থলের যেসব জায়গায় জল জমে থাকার সম্ভাবনা আছে সেখানে যাতে কোনোরকম জল জমে না থাকে সেই দিকে নজর রাখতে হবে। তাই বাড়ির চৌবাচ্চা, ফুলদানি, ডাব বা নারকেলের খোলা, টায়ার ইত্যাদিতে যাতে কোনোভাবেই লাগাতার জল জমে থাকতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে, কারণ এই সব আধারে জমে থাকা জলেই ডেঙ্গির বাহক 'এডিস' মশা ডিম পাড়তে পারে এবং সেখান থেকেই দ্রুত এই মশারা বংশবিস্তার করে থাকে।
উপসংহার :
আজকের যুগে এই রোগের কাছে আমাদের অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করারও কোনো কারণ নেই। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার দৈন্য আমাদের মধ্যে অস্বাভাবিক আতঙ্ক এনে দেয়। সরকার, জনসাধারণ, পুর ও স্বাস্থ্যকর্মী সকলের আন্তরিক চেষ্টা থাকলে ডেঙ্গি রোগ মহামারির রূপ ধারণ করতে পারবে না।
আরও পড়ুন-