ভূমিকম্প বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ভূমিকম্প” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ভূমিকম্প বাংলা রচনা || Earthquake Bangla Rachana
ভূমিকম্প
"ভূস্বর্গ কাশ্মীরে ভূমিকম্প খেলা,
সহসা চমকে দিল প্রকৃতির লীলা।"
সেদিনের তারিখটা ছিল ৯ অক্টোবর, ২০০৬, রবিবার।
সূচনা :
আমাদের পশ্চিমবঙ্গে চলছে শারদীয়া পুজোর আয়োজন। আকাশের রোদ্দুরে সোনালি আমেজ। বাতাসে শিউলির গন্ধ। আসন্ন পুজো নিয়ে আমরা তখন স্বপ্ন-বিভোর। এমন একটি দিনে প্রভাতী সংবাদপত্র হঠাৎ বহন করে নিয়ে এল ভয়ংকর এক দুঃসংবাদ। কাশ্মীরের 'উরি' অঞ্চলের সবটাই ভূমিকম্পের প্রকোপে তলিয়ে গেছে ভূগর্ভে। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছে বসতিগুলি। হাজার হাজার মানুষ হারিয়ে গেছে, সমাধিলাভ করেছে মাটির গভীরে। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরেই ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সব থেকে বেশি।
অতীতের সঙ্গে তুলনা :
২০০১ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি ছিল এমনই এক ভয়ংকর ভূমিকম্পের দিন। কেঁপে উঠেছিল গুজরাটের মাটি। তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল বহুতল বাড়িগুলি। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে লাটুর যেভাবে কেঁপে উঠেছিল এবং যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল ১৯৯১-এর উত্তর কাশী, ২০০১-এ যেন তারই পুনরাবৃত্তি দেখা গেল। কাশ্মীরে রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের সর্বোচ্চ তীব্রতা ছিল ৭.৫। পুরো এক মিনিট বা একটু বেশি সময় ধরে কেঁপে উঠল দুই কাশ্মীর, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং উত্তর ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
ভূকম্পনের উৎস :
খোঁজ নিয়ে দেখা গেল এই ভূকম্পনের উৎস হল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৯৫ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে শিপাল মসজিদ এলাকাটি। ওই অঞ্চলটি পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজফ্ফরাবাদের খুবই কাছে। শোনা গেল, কম্পনের ধাক্কায় শহরের 'মারগাল্লা টাওয়ার' আবাসনের দুটি দশতলা ব্লক ধসে পড়েছে তাসের ঘরের মতো এবং সেই স্তূপের তলায় চাপা পড়েছে কয়েকশো লোক। জানা গেল, ইসলামাবাদে ভূমিকম্পের পর ১২টি আফটার শক হয়েছে। মানুষ এবং সম্পদের যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এককথায় অপূরণীয়।
কেন এই ভূমিকম্প :
ভূমিকম্পে কত লোক যে মারা গেছে, তা বলা সম্ভব নয়। কাশ্মীর সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন। খবরে প্রকাশ পেল অধিকৃত কাশ্মীরে ৯০ শতাংশ বাড়িই মাটিতে মিশে গেছে। মৃতের সংখ্যা কমপক্ষে এক লক্ষ। গৃহহারা হয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ। মাটির নীচ থেকে শোনা যাচ্ছে বেঁচে থাকা মানুষদের ক্ষীণ কণ্ঠস্বর। ভূতত্ত্ববিদরা জানালেন, কাশ্মীর ও সন্নিহিত এলাকায় ইন্ডিয়ান প্লেটটি ইউরেশীয় টেকটনিক প্লেটের দিকে হঠাৎ বেশ খানিকটা সরে যাওয়াতেই ওই ভয়ংকর ভূমিকম্প সংগঠিত হয়েছে।
খাদ্যের অভাব :
অধিকৃত কাশ্মীরের বেশিরভাগ জায়গা হল শীতপ্রধান, দুর্গম, বরফে ঢাকা। বেশিরভাগ লোকই গরিব, অসহায়। এদের মাঝেই রয়েছে আবার আতঙ্কবাদীদের শিবির। প্রবল ভূকম্পনে এদের শিবিরগুলিতেও ধস নামল। খাদ্য, পথ্য, আশ্রয় এবং ওষুধের জন্য পড়ে গেল হাহাকার।
ত্রাণসামগ্রী :
এই ভয়ংকর ভূমিকম্পে যাঁরা বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে এসেছে গোটা বিশ্ব। এগিয়ে এসেছে আমেরিকা-সহ ভারত, চিন, তুরস্ক, জাপান, জার্মানি, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান, স্পেন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া। এগিয়ে এল বড়ো-ছোটো আরও নানান দেশ। রাষ্ট্রপুঞ্জ বিভিন্ন দেশের কাছে সাহায্য চেয়ে বিশেষ তহবিল গঠনের জরুরি ডাক দিয়েছে।
উপসংহার :
পাকিস্তানের জনগণের এই দুর্দিনে ভারতবর্ষ শিথিল করে দিয়েছে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখা। এই রেখা অতিক্রম করে ভারতের সাহায্যের হাত পৌঁছে গেছে আর্ত মানুষদের সেবায়। ভারতীয় সৈনিকরা বন্দুক ফেলে ওপার কাশ্মীরে পৌঁছে দিয়েছে খাবার, ওষুধ, পানীয়, শীত থেকে বাঁচবার পোশাক এবং কয়েক হাজার তাঁবু। বিপদের দিনে বিপদগ্রস্ত প্রতিবেশীর সেবায় তার প্রতিবেশীই যে এগিয়ে আসে, তা দেখিয়ে দিল ভারত। এটাই তো মানুষের পরিচয় যা ভারত চিরকাল দিয়ে এসেছে।
আরও পড়ুন-