গাছ আমাদের বন্ধু বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “গাছ আমাদের বন্ধু”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
গাছ আমাদের বন্ধু বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Gach Amader Bondhu class-10
গাছ আমাদের বন্ধু
"অন্ধভূমি গর্ভ হতে শুনেছিলে সূর্যের আহ্বান
প্রাণের প্রথম জাগরণে, তুমি বৃক্ষ, আদিপ্রাণ”
প্রথম প্রাণ: একটি গাছ :
ধরিত্রীর বক্ষে প্রথম প্রাণের অস্তিত্ব ঘোষণা করেছিল বৃক্ষ। ভূমিগর্ভের অন্ধকার বিদীর্ণ করে বৃক্ষই প্রথম প্রণাম জানিয়েছিল প্রভাত সূর্যকে। ধরিত্রীর বন্ধ্যাদশা ঘুচিয়ে ধীরে ধীরে তার বক্ষকে সবুজায়িত করেছে বৃক্ষ। রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষকে উদ্দেশ করে বলেছেন, "মৃত্তিকার বীর সন্তান”।
আশ্রয় :
ধরিত্রীতে মানুষের আবির্ভাবলগ্নে বৃক্ষই ছিল মানুষের প্রধান আশ্রয়। আদিম মানুষকে বৃক্ষই দিয়েছে খাদ্য, পরিধেয় আর আশ্রয়। সভ্যতার অগ্রগতিতেও গাছ আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে যায়নি বরং তার প্রয়োজনীয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃক্ষকে আশ্রয় করেই মানুষের জীবনচক্র আজও আবর্তিত হচ্ছে।
তপোবন: প্রাচীন সভ্যতার উন্মেষ :
তপোবনের মধ্যে প্রাচীন ভারতবর্ষে একদিন সভ্যতার উন্মেষ হয়েছিল। এখানেই ভারতীয় ঋষিরা বৃক্ষের বাণী শুনতে পেয়েছিলেন। তপোবন ছিল তাদের সাধনক্ষেত্র। আরণ্যক পরিবেশে তাঁরা মহৎ জীবনসত্য উপলব্ধি করেছিলেন। এখানেই রচিত হয়েছিল 'বেদ-উপনিষদ'। এখানেই আর্য ঋষিরা সামগান করেছিলেন। তাই দেখা যায় রামায়ণ ও মহাভারত মহাকাব্যে অরণ্যের প্রভাব এত বেশি। রামচন্দ্রের চোদ্দো বছর বনবাস, মহাভারতের বনপর্ব সবই অরণ্যের সঙ্গে নিবিড় যোগ ঘোষণা করেছে।
নতার সভ্যতার নির্মমতা :
অতীতের সে আরণ্যক-জীবন আর নেই। এসেছে নগরকেন্দ্রিক সভ্যতা। বনভূমির অভাবে বৃষ্টিপাত কমেছে, বেড়েছে মরুভূমি। যার জন্য রবীন্দ্রনাথ বলেছেন-
"দাও ফিরে সে অরণ্য
লহ এ নগর।"
গাছ: নিত্য ব্যবহার্য :
বৃক্ষ মানুষের পরম উপকারী বন্ধু। বৃক্ষ থেকে পশুর খাদ্য, মানুষের খাদ্য, নানা রোগ নিরাময়ের ওষুধপত্র পাওয়া যায়। রং, তেল, চিনি- এসবই হল বৃক্ষের দান। সভ্য মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় হল কাগজ। গাছ থেকেই এই কাগজ তৈরি হয়। স্থলযান, নৌযান, গৃহনির্মাণ, গৃহসজ্জার আসবাব নির্মাণে গাছের অবদান সর্বাধিক।
বনবৃদ্ধি :
সবুজ রং মানুষের দৃষ্টিকে নন্দিত করে। শ্যামল প্রকৃতির সংস্পর্শে এলে মানুষের মন সতেজ হয়। সুন্দরবন অঞ্চলে যথেচ্ছ বৃক্ষচ্ছেদন হওয়ায় বৃষ্টির পরিমাণ কমে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টির জন্য বনবৃদ্ধির প্রয়োজন। আর বনবৃদ্ধি হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষিত হয়।
বনমহোৎসব :
বনবৃদ্ধির মানসে রবীন্দ্রনাথ শ্রাবণ মাসে শান্তিনিকেতনে 'বনমহোৎসবে'র আয়োজন করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন-'মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে/হে প্রবল প্রাণ। ...মাধুরী ভরিবে ফুলে ফলে পল্লবে/হে মোহন প্রাণ'-মরুবিজয় করতে এবং ফুল-ফলে-পল্লবে মাধুরী ভরে তুলতেই বনমহোৎসবের সূচনা। সরকারও এই উৎসবকে গ্রহণ করেছে।
বৃক্ষচ্ছেদন নয়, বৃক্ষরোপণ :
বনমহোৎসবে বৃক্ষরোপণই শেষ কথা নয়। শিশু ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে পরম যত্নে লালনপালন করে মা তাঁকে বড়ো করে তোলেন। তেমনি শিশুবৃক্ষকেও সযত্ন পালনে বড়ো করে তোলা প্রয়োজন। সরকারি, বেসরকারি স্কুল, কলেজ, সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠানে বনমহোৎসব প্রতি বছর প্রতিপালিত হয়। পরম পরিতাপের বিষয় এই যে, সাড়ম্বরে বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের পর রোপিত বৃক্ষ যাতে বিনষ্ট না হয়, সেদিকে কারও লক্ষ থাকে না। তাই আজকের দিনের মন্ত্র হওয়া উচিত 'গাছ লাগাও, প্রাণ বাঁচাও'।
আরও পড়ুন-