Ads Area


আন্তর্জাতিক যোগদিবস বাংলা প্রবন্ধ রচনা || International Yoga Day

আন্তর্জাতিক যোগদিবস বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “আন্তর্জাতিক যোগদিবস” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

আন্তর্জাতিক যোগদিবস বাংলা প্রবন্ধ রচনা || International Yoga Day


 আন্তর্জাতিক যোগদিবস বাংলা প্রবন্ধ রচনা || International Yoga Day 


আন্তর্জাতিক যোগদিবস বাংলা প্রবন্ধ রচনা


ভূমিকা :

যোগাসন-এর জন্ম ভারতে। প্রায় ৫০০০ হাজার বছরের পুরোনো, সিন্ধু সভ্যতায় উদ্ধার হওয়া পদ্মাসনে উপবিষ্ট 'পশুপতি' মূর্তি দেখে বিশেষজ্ঞরা ধারণা করেন, ভারতে যোগাসনের চল ছিল। যোগের সাহায্যে শরীর ও মন-দুই সুস্থ থাকে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত বছরের সেপ্টেম্বরে রাষ্ট্রপুঞ্জে গিয়ে 'আন্তর্জাতিক যোগদিবস' পালনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তাঁর এই আবেদন মেনে নিয়ে ২১ জুন দিনটিকে রাষ্ট্রপুঞ্জ আন্তর্জাতিক যোগদিবস বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ্বের ১৭৭টি দেশ আন্তর্জাতিক যোগদিবস পালনের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছিল। রাজ্য সরকারের তরফ থেকেও যোগদিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

কেন্দ্র ও রাজ্যস্তরে উদ্যোগ :

২১ জুন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে অসংখ্য যোগকেন্দ্র-সহ বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা হাজির হয়েছিলেন। ক্রীড়া ও আয়ুষ দফতর যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজে আন্তর্জাতিক যোগদিবস পালন নিয়ে কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের সার্কুলার, কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের তরফে স্কুলে স্কুলে পাঠানো হয়। যোগচর্চার সঙ্গে যুক্ত কলকাতার বিভিন্ন সংগঠন এতে যোগ দেয়। রামকৃষ্ণ মিশন, আদ্যাপীঠ, ভারত সেবাশ্রম সংঘ, আর্ট অফ লিভিং এবং প্রজাপতি ব্রহ্মকুমারীর মতো প্রতিষ্ঠানগুলির তরফে স্কুলে স্কুলে উপস্থিত ছিলেন যোগাসনে পারদর্শী বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। 

বিভিন্ন স্কুলের ছেলেমেয়েরাও তাঁদের সঙ্গে যোগ দেয়। যদিও দিল্লির রাজপথে যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী-সহ অন্যান্য মন্ত্রীরাও যোগাসনে সক্রিয়ভাবে যোগ দিয়েছিলেন, তেমন প্রত্যক্ষভাবে যোগচর্চায় অংশগ্রহণ করার কোনো সুযোগ ছিল না নেতাজি ইন্ডোরে। অনুষ্ঠানটি আরম্ভ হয়েছিল স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতা দিয়ে, এরপর ছিল যোগ নিয়ে স্বাগত ভাষণ। এরই মাঝে মাঝে মঞ্চে দেখানো হল রোগ প্রতিরোধক বিভিন্ন আসন। শুধু তাই নয়, যোগাপ্যাথিক ক্লিনিক ছিল প্রেক্ষাগৃহের বাইরে; সেখানে নিখরচায় সবাইকে যোগাসন সম্পর্কিত নানান পরামর্শও দেওয়া হচ্ছিল। এ ছাড়াও যোগের ওপর নৃত্যনাট্য হয়। সেই সঙ্গে স্বামী যোগানন্দ, বিষ্ণুচরণ ঘোষ, মনোতোষ রায়, নীলমণি দাস প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানানো হয় এই অনুষ্ঠানে। এখানে প্রতিটি জেলাতেই আড়ম্বরের সঙ্গে সরকারি উদ্যোগে যোগদিবস পালিত হয়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা :

 সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানেও যোগদিবস পালিত হয়। তারা ২০ জুন থেকেই যোগদিবস পালনে উদ্যোগী হয়েছিলেন। এই দিন ক্রীড়াভারতী নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ১৬টি যোগকেন্দ্রকে নিয়ে আয়োজিত হয় এক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি এবং কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনতয়ান উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা দুজনেই রোগ প্রতিরোধে যোগের ভূমিকা আলোচনা করেন। এ ছাড়াও হাওড়ার মৌড়িগ্রামের হরিরাম ইনস্টিটিউট, কোলকাতার জে.বি. রায় আয়ুর্বেদিক কলেজের মতো ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানেও পূর্ণ উদ্যমে যোগদিবস পালিত হয়েছিল।

বাংলায় যোগশিক্ষার ইতিহাস ও ঐতিহ্য :

 পশ্চিমবঙ্গের পাঠ্যসূচিতে ব্রতচারী এসেছে। ভালো করে লক্ষ করলে দেখা যায় যোগ ছাড়া এই খেলাধুলা সম্পন্ন করা সহজ নয়। বিবেকানন্দের ছেলেবেলায় ধ্যান-ধ্যান খেলা আত্মমগ্নতার অনন্য উপায় ছাড়া আর কিছুই নয়। 'যোগ' কথার অর্থই হল সংযুক্তিকরণ। শরীরের সঙ্গে মনের, বহিঃপ্রকৃতির সঙ্গে অন্তঃপ্রকৃতির নিবিড় একাত্মতা গড়ে ওঠে যোগাসনের মাধ্যমে। মানসিক একাগ্রতা, নিষ্ঠা, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সর্বোপরি শারীরিক সক্ষমতার চূড়ান্ত নিদর্শন হল যোগাসন। মানবীয় নৈপুণ্যের সামগ্রিক বিকাশ সাধিত হয় নিয়মিত যোগাসন চর্চায়। তা যেমন মানুষের মন ও শরীরকে সুন্দর করে তোলে, তেমনই চিন্তার প্রসার ঘটায়। বাংলায় দীর্ঘকাল ধরে যোগাসনের চর্চা চলে আসছে। বাংলাকে যোগব্যায়ামের ভাবনায় অনেক দিন ধরেই যিনি এগিয়ে নিয়ে গেছেন তিনি হলেন নীলমণি দাশ। তাঁর লেখা যোগাসন শিক্ষার বই এক অমূল্য পুস্তক। নীলমণি দাশ কলকাতার আমহার্স্ট রো অঞ্চলের ছেলে, বাবা নিবারণ দাশ।

 ব্যায়াম ও শরীরচর্চার অভ্যাস উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছিলেন নীলমণি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন শরীর চালনার জন্য দেহের অভ্যন্তরেই বিশেষ শক্তি সঞ্চয় করা দরকার। আর সেই শক্তির উৎস হল যোগাসন। তাই সহজসরল ভাষায়, ছেলে ও মেয়েদের জন্য আলাদা করে তিনি যোগাসন নিয়ে বই লিখেছিলেন। বাংলায় যোগাসন চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ এই মানুষটিকে নিয়ে লেখা বহুচর্চিত বইটি হল বাণীব্রত চক্রবর্তীর 'লৌহমানব নীলমণি দাশ'। তাঁর স্বপ্ন ছিল বাঙালির শরীর, মন ও চরিত্রের পূর্ণ বিকাশ। এক সময় বিষুচরণ ঘোষের পরে তিনিও আকাশবাণীতে ব্যায়াম নিয়ে নিয়মিত বলতেন।

তাই সম্প্রতি যে যোগদিবস পালিত হল আশা করা যায় এই পদক্ষেপ ভারত তথা বাংলাকে সুস্থ ও সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে, গড়ে উঠবে এক সুস্থ-সবল দেশ।

আরও পড়ুন-

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area