Ads Area


'কন্যাশ্রী' প্রকল্প বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Kanyashree Prakalpa In Bengali

'কন্যাশ্রী' প্রকল্প বাংলা প্রবন্ধ রচনা

পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “কন্যাশ্রী প্রকল্প” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

'কন্যাশ্রী' প্রকল্প বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Kanyashree Prakalpa In Bengali


'কন্যাশ্রী' প্রকল্প বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Kanyashree Prakalpa In Bengali


'কন্যাশ্রী' প্রকল্প


ভূমিকা :

কবি রবীন্দ্রনাথ প্রায় একশো বছর আগে লিখেছিলেন, "নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার/কেন নাহি দিবে অধিকার/হে বিধাতা?”-পরাধীন দেশে কবির উত্থাপিত এই প্রশ্নের উত্তর একবিংশ শতকের স্বাধীন ভারত তথা বাংলা আজও খুঁজে পেয়েছে কি? এখনও দেশের অধিকাংশ মেয়ে শিক্ষার মূলস্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অতি অল্প বয়সেই নিতান্ত সাংসারিক সামগ্রী হিসেবেই বিবেচিত হয়, মানবসভ্যতার এর চেয়ে বড়ো গ্লানি বা লজ্জা আর কী আছে? এখনও কন্যাভ্রুণ হত্যা কিংবা বাল্যবিবাহের মতো নির্দয়তা সমাজে স্বীকৃত, এ কি মানবতার অসম্মান নয়? হ্যাঁ, আমাদের রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেও এর ব্যতিক্রম ঘটে না। বাংলার কৃতী মানুষেরা অনেক উন্নত ভাবনায় নিজের রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে গেলেও, এখনও মেয়েদের এগিয়ে চলার পথ প্রতিবন্ধকতায় পূর্ণ। মাত্র কয়েক বছর আগেও পশ্চিমবঙ্গ বাল্যবিবাহে দেশের পঞ্চম স্থানে ছিল। বালিকাদের মধ্যে মাঝপথে লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়ার হারও ছিল যথেষ্ট বেশি। এই প্রবণতা আটকাতে এবং মেয়েদের স্বনির্ভর করার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে অক্টোবর মাস থেকে রাজ্য সরকার চালু করে 'কন্যাশ্রী' প্রকল্প।

প্রকল্পের নিয়ম, উৎস ও বাস্তবতা :

কন্যাশ্রী প্রকল্প অনুসারে, যেসব পরিবারের বাৎসরিক আয় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বা তার চেয়ে কম, সেই পরিবারের ১৩ থেকে ১৮ বছরের ছাত্রীরা বছরে ৫০০ টাকা করে (এখন বেড়ে হয়েছে ৭৫০ টাকা) বৃত্তি পাবে। যদিও অনাথ বা প্রতিবন্ধী ছাত্রীদের ক্ষেত্রে আয়ের কোনো ঊর্ধ্বসীমা নেই। শিক্ষার মূলস্রোতে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে গেলে এই ছাত্রীরা ১৮ বছর বয়সে পাবে এককালীন ২৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ কোনো মেয়ের উচ্চশিক্ষা লাভের লক্ষ্যপূরণের জন্য সরকার তার পাশে দাঁড়াবে। এই প্রকল্পের জন্য এখন রাজ্য সরকারের বছরে খরচ হচ্ছে ৮৫০ কোটি টাকা। আগামী বছরগুলিতে এই ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধির সম্ভাবনাই আরও বেশি। রাজ্যের প্রায় ২০ লক্ষ ছাত্রী এই সুবিধা পাচ্ছে। এই প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে সংখ্যাটা প্রতি বছর বেড়েই চলেছে।

ভারতের মতো দেশে নারীশক্তির এই অবমাননার মূল কারণ হল সীমাহীন দারিদ্র্য। আর্থিকভাবে অনগ্রসর এই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই শিক্ষায়-সামর্থ্যে পিছিয়ে পড়া। কিন্তু যিনি বা যারা পিছিয়ে; দোষটা তাদের নয়, দোষটা রাষ্ট্রের ও সমাজের। সম্পদ বণ্টন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থেকেই সমাজে ক্রমাগত আর্থিক অসাম্য বাড়ে। কোটি কোটি মানুষকে অভাবগ্রস্ত ও দরিদ্র করে রাখে যে উন্নয়ন, সেই উন্নয়ন গণতন্ত্রের কাম্য নয়। তা ছাড়া বড়ো অংশের মানুষ উন্নয়নের সুফল থেকে বঞ্চিত হলে সমাজে অশান্তি, হিংসা ক্রমশই বাড়বে, এখন সমাজবিজ্ঞানীরা এমনটাই মনে করেন। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন তাঁর বিভিন্ন লেখায় এবং বক্তৃতায় বলেছেন, পিছিয়ে থাকা মানুষকে উন্নয়নের শরিক করলে তবেই গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়; আর গণতন্ত্র শক্তিশালী হলেই পিছিয়ে থাকা মানুষ উন্নয়নের সুফল লাভ করে।

 তাই এই দুটো কাজ একসঙ্গে করতে হবে। 'কন্যাশ্রী' প্রকল্প যেন সেই যাত্রার দিকে একটি ছোট্ট পদক্ষেপ। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করা জরুরি, বছরে ৫০০ টাকা হয়তো খুব বিরাট অঙ্কের টাকা নয়, কিন্তু সেই টাকাটাও যে ছাত্রীর প্রাপ্য, তার জন্যই খরচ করা হচ্ছে কি না সেই ব্যাপারেও একটি সরকারি নজরদারি থাকা জরুরি। ১৮ বছরের কন্যাকেও যখন সরকার ২৫ হাজার টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে দেবে, সেখানেও এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে মেয়েদের শুধু অধিকার দিলেই হবে না, তা রক্ষা করা হচ্ছে কি না, সেটা দেখাও সরকারের দায়িত্ব। উল্লেখ্য নারীশিক্ষা ও নারীপ্রগতির স্বার্থে সরকার যখন সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে, তখন জনমানসে তার একটি সদর্থক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।

উপসংহার :

'কন্যাশ্রী' প্রকল্প পৃথিবীর বহু জায়গায় একটি উন্নতমানের কল্যাণকামী প্রকল্প হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সরকারের খেয়াল রাখা উচিত তা যেন নজরদারির অভাবে ব্যর্থ না হয় এবং অবশ্যই বার্ষিক ব্যয়বরাদ্দের পরিমাণও আরও কিছুটা বাড়ালে ভালো হয়। 'কন্যাশ্রী' প্রকল্পের ফলে সুফল কতটা ফলল, মাঝপথে স্কুল-ছুটের সংখ্যা কতটা কমল, বাল্যবিবাহ কতটা রোধ হল, তা বিচারের সময় এখনও আসেনি। তবে প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে অনেকেই মনে করছেন, পরিবর্তন চোখে পড়ছে, কমছে স্কুল-ছুটের প্রবণতা। তাই এই প্রকল্প সাফল্যের সঙ্গে রূপায়িত হলে সুফল পাওয়া যাবে, সমাজের বিরাট সংখ্যক পিছিয়ে পড়া অংশের মেয়েরা অদূর ভবিষ্যতে নিজের ভাগ্য নিজেই নির্ধারণ করবার অধিকার অর্জন করবে; এমনটা আশা করাই যায়।

আরও পড়ুন-

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.

Top Post Ad

Below Post Ad

Ads Area