পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Paribesh Dushan o Tar Protikar Class-10
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার
"জীবনের সার্থকতা পরিবেশ নির্ভর,
নির্মল অভঙ্গনে সবকিছু মনোহর"
ভূমিকা :
গাছপালা, পশুপাখি, বন্যপ্রাণী, মাছ, কীটপতঙ্গ, আলো, শব্দ, উত্তাপ, জল, বায়ু, মাটি এবং সর্বোপরি মানুষের তৈরি ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, কলকারখানা-এসবকেই এককথায় পরিবেশ বলা হয়। যন্ত্রযুগের বিষবাষ্পে এবং নগরকেন্দ্রিক সভ্যতার অভিঘাতে এই পরিবেশ ক্রমে ক্রমে দুষিত হচ্ছে। বিষিয়ে উঠছে বায়ু, নিভে যেতে বসেছে সভ্যতার আলো। পরিবেশ হল চারপাশের জাগতিক পরিস্থিতি। বিভিন্ন কারণে এই পরিবেশ দূষিত হয়। এই পরিবেশ দূষণকে বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়। যথা- ১) বায়ুদূষণ, ২) ৩)জলদূষণ, ৪)মাটিদূষণ, ৫)শব্দদূষণ এবং ৬) সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশ দূষণ।
পরিবেশ দূষণ :
বর্তমান বিশ্বে নানাবিধ মারণাস্ত্র, নানা ধরনের 'পারমাণবিক পরীক্ষা ও বিস্ফোরণের তেজস্ক্রিয় রশ্মি ও তেজস্ক্রিয় কণা', শিল্প-কলকারখানায় জ্বালানো গ্যাস ও আবর্জনা, যানবাহনের জ্বালানি দ্বারা বায়ু বিষাক্ত ও দূষিত হয়ে পড়েছে।
জলদূষণ :
আজকের দিনে জলদূষণ এক ভয়ংকর সমস্যা। কলকারখানার দুষিত বর্জ্য পদার্থ দ্বারা পানীয় জল সরবরাহের উৎসগুলো দূষিত হচ্ছে। এর ফলে মানুষ ও জলচর প্রাণীর প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে।
ভূমিদূষণ :
কৃষি ও শিল্পবিপ্লবই হল ভূমিদূষণের প্রধান কারণ। চাষের জমিতে নানারকম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধ প্রয়োগের ফলে ভূমি দূষিত হচ্ছে। শিল্প-কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ ও শহর এলাকার আবর্জনার স্তূপ পচে মাটি দূষিত হচ্ছে। এর ফলে নানা সংক্রামক ব্যাধির দূত বিস্তার ঘটছে।
শব্দদূষণ :
অতি যান্ত্রিকতার ফলে শব্দ আজ মানবজীবনে নিদারুণ সংকট সৃষ্টি করে চলেছে। কলকারখানার শব্দ, যন্ত্রদানবের বিচিত্র হর্ন, বিমানের শব্দ, বাজি-পটকার আওয়াজ মারাত্মক আকার ধারণ করে পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট করছে। সড়ক ও শহরের পথে যানবাহনের বিকট আওয়াজে অনেকে শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে।
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ :
মনস্তাত্ত্বিক দূষণ হল আর-এক জাতীয় দুষণ। সামাজিক অপসংস্কৃতি, বেকারত্ব, অতি পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রীতি, সিনেমা, কুরুচিকর পত্রিকা, পুস্তক প্রভৃতি যুবক-যুবতীদের এবং বিশেষভাবে ছাত্রছাত্রীদের নৈতিক অধঃপতন ঘটাচ্ছে। এর ফলে তাদের মধ্যে কুরুচি ও অপরাধ প্রবণতা বাড়ছে।
দূষণের প্রতিকার ও ছাত্রসমাজের ভূমিকা :
নানান ধরনের পরিবেশ দূষণের হাত থেকে মুক্তির জন্য আজ বিশ্বের সুস্থ-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষদের সচেষ্ট হতে হবে। সংবাদপত্র, টিভি, রেডিয়ো প্রভৃতি গণমাধ্যমগুলির মাধ্যমে প্রতিকারের প্রচার বাড়াতে হবে এবং ছাত্রছাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে। জলদূষণ, মাটিদূষণ রোধ করার জন্য সরকারি আইন কঠোরভাবে বলবৎ করতে হবে। শব্দদূষণের ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশ মানতে হবে। সাংস্কৃতিক দূষণ যাতে না ছড়ায় তার জন্য সমস্ত নাগরিক, অভিভাবক, শিক্ষক প্রমুখকে সচেষ্ট হতে হবে। সামাজিক বনসৃজনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সাহিত্য ও সংস্কৃতি জগতে যাতে দূষণ না ঘটে সেই ব্যাপারেও সচেতন থাকতে হবে।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস :
রাষ্ট্রসংঘ সার্বিক দূষণ, প্রতিকারের জন্য এগিয়ে এসেছে। প্রতি বছর জনগণকে পরিবেশ সচেতন করবার জন্য ৫ জুন দিনটি 'বিশ্ব পরিবেশ দিবস' হিসেবে পালিত হচ্ছে।
উপসংহার :
আমাদের পরিবেশ যদি মালিন্যমুক্ত হয়, তবে পৃথিবীর এই সভ্যতাও সুন্দরভাবে গড়ে উঠবে। এর জন্য চাই সর্বজনীন শিক্ষা ও সচেতনতা। অন্যথায় 'সুন্দর কুসুমিত মনোহরা' ধরাই একদিন 'জরা ও মৃত্যু-ভীষণা' ধরায় পরিণত হবে।
আরও পড়ুন-