পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Paribesh Rakhaye Jalabhumira Bhumika
পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির ভূমিকা
জলাভূমির তাৎপর্য ও বিপন্নতা :
জল হল জীবজগতের এক অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি। প্রাণীজগৎ ও উদ্ভিদজগৎ উভয়েই জলের উপর নির্ভরশীল। তাই পরিবেশ রক্ষায় জল ও জলাশয়ের অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। তবে বর্তমানে জনসংখ্যার বৃদ্ধি, বেহিসেবি নগরায়ণ, শিল্পের প্রসার এবং পরিকল্পনাহীন উন্নয়নের বিকৃত বিস্তারে প্রাকৃতিক জলাশয়গুলির অবস্থা বিপন্ন হতে বসেছে। এ কথা আমাদের সকলেরই জানা যে পৃথিবীর তিনভাগ জল ও এক ভাগ স্থল। সত্যি কথা বললে প্রাণের অন্যতম উৎসই হল জল। তাই প্রতিদিনের চলার পথে জলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তৃষ্ণা নিবারণ, চাষ-আবাদ থেকে কলকারখানার কাজ কিংবা দৈনন্দিন ঘর-গেরস্থালির বিভিন্ন প্রয়োজনে জল ছাড়া কোনো কিছুই কল্পনা করা যায় কি? একই সঙ্গে এই আশ্চর্য পৃথিবীর এক শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্য হল তার জলীয় ভূভাগ। কিন্তু ভুললে চলবে না জল নানাস্থানে যথাযথভাবে পাওয়া যায় না। তাই জীবনদায়ী জল, সযত্নে সংরক্ষণ করা জরুরি।
জল সংরক্ষিত না হলে পরিবেশ সুন্দর ও নির্মল হয়ে উঠবে না, থাকবে না বসবাসের যোগ্য পরিবেশ। এই সত্য জেনেই লোভী, নির্দয় ও স্বার্থান্বেষী মানুষের দল সর্বংসহা বসুন্ধরার বুক থেকে তার সজলতা কেড়ে নিতে তৎপর। ক্রমাগত গাছ কেটে উন্নয়নের ফলে দেখা দিচ্ছে অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টি, আবার কলকারখানার বর্জ্য জলে ফেলায় দূষণ বেড়েই চলেছে। ক্রমে একই পুকুরে মানুষ ও মোষ স্নান করছে, কাপড় কাচা হচ্ছে, সব মিলিয়ে জল না থাকছে পানের যোগ্য; না থাকছে ব্যবহারের যোগ্য। জলাভূমিকে অনেক স্থানে মাটি দিয়ে ভরে গড়ে তোলা হচ্ছে মিনি শহর।
জলাভূমি সংকোচনের ফলে কলকাতার অনেক জায়গায় জলনিকাশি ব্যবস্থাতেও ত্রুটি ধরা পড়েছে। মনে রাখা প্রয়োজন জলাভূমি 'ওয়েট ল্যান্ড', 'ওয়েস্ট ল্যান্ড' বা 'পতিত জমি' নয়। জলা অঞ্চল পরিবেশগতভাবে ভারসাম্য বজায় রাখতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিখ্যাত পরিবেশ বিজ্ঞানী আসলে মল্টবি তাঁর এক গ্রন্থে লিখেছেন যে, জলা অঞ্চল জীবন রক্ষার অত্যাবশ্যকীয় ব্যবস্থা বহন করে। তাঁর এই ভাবনাটি ছড়িয়ে দিতে হবে সমাজে। সচেতনতা আনতে, সব মানুষের মনে জাগিয়ে তুলতে হবে পরিবেশ সচেতনতা বা প্রকৃতিমনস্কতা।
পরিবেশের কোনো কিছুই নিছক অপ্রয়োজনের সৃষ্টি নয় এবং বহু বছরের ভাঙাগড়ায় মানুষ আজকের মানবীয় পরিমন্ডলকে পেয়েছে। তা মানুষের হাতে একবার বিনষ্ট হলে আর অতি সহজে পুনর্গঠিত হবে না। তাই মানুষকে তার চারপাশের পরিবেশের কার্যকারণ বুঝতে হবে আর এর জন্য চাই পরিবেশকে ভালোবাসার শিক্ষা ও চেতনা। জলা অঞ্চল স্বাভাবিক পদ্ধতিতে জল জোগানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সে বিষয়ে যেমন সবাইকে সচেতন হতে হবে তেমনি সকলকে একজোট হয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
প্রতিকারের উপায় :
জলা অঞ্চল যে নোংরা পরিষ্কার, জল শোধন, মাছ চাষ, খাদ্য উৎপাদন প্রভৃতিতে বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করে-এ কথাটি মানুষকে জানাতে হবে। এ ছাড়াও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, পরিবেশ শুদ্ধিকরণ, জমি ক্ষয় প্রতিরোধ, ভূগর্ভে জলের স্তর উন্নতিকরণ, লবণাক্ত ও অ-লবণাক্ত জলের মধ্যে প্রাচীর তৈরি করা ইত্যাদি বিষয়েও প্রতিটি প্রাকৃতিক জলাভূমির সদর্থক ভূমিকা আছে।
শুধু এটুকুই নয়, অক্সিজেন উৎপাদনেও জলাভূমি গভীর ভূমিকা পালন করে। জলাভূমিই পারে আমাদের ভয়াবহ সাইক্লোন থেকে রক্ষা করতে। কিন্তু অজ্ঞ মানুষেরা নির্বিচারে জলাভূমি বুজিয়ে ফেলায় পরিবেশবিদ ও সমাজবিদরা অনেকেই মনে করেন আগামী দিনে জল নিয়ে সমাজ জীবনে যে সমস্যা হাজির হবে তা জাতপাতের সমস্যা থেকেও অনেক বড়ো আকার ধারণ করবে। সুতরাং পরিবেশকে সুস্থ, সুন্দর রাখা এবং জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন করার সময় এসেছে।
বর্তমানে কিছু কিছু শহরে জলাভূমি বাঁচানোর জন্য নাগরিক সমাজ সচেষ্ট হতে শুরু করেছে। এই নিয়ে চলছে নানা সেমিনার, উ আলোচনা সভা এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর বিভিন্ন ইতিবাচক প্রয়াস। আমাদের এলাকায় একটি সামান্য পুকুর না থাকায় স্থানীয় পরিবেশে কোন্ কোন্ ভারসাম্যহীনতার লক্ষণ ফুটে উঠতে শুরু করে, তা মানুষকে স্পষ্ট করে বোঝাতে হবে। জলের ঘাটতি কমাতে নতুন প্রজন্মদের সচেতন করতে নিয়মিত শুরু করতে হবে বৃষ্টির জল সংরক্ষণ প্রকল্প।
যেমন এখন নরেন্দ্রপুর জী রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলের ছাত্ররা শামিল হয়েছে উর্জাচেতনা প্রজেক্টে। এই ধরনের প্রকল্পে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত করা হচ্ছে। আরও বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত করতে হবে। জল সংরক্ষিত করতে হলে গাছ লাগাতে হবে, বৃষ্টির জলকে ধরে রেখে তা কাজে লাগাতে হবে। একই সঙ্গে জলাশয় বোজানোও বন্ধ করতে হবে। এই সমস্ত বিষয়ে তৎপরতা এবং সচেতনতাই হয়তো আগামী দিনে গড়ে তুলবে নতুন দিগন্ত।
আরও পড়ুন-