পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Paribesh Rokhay Aranya Class-10
পরিবেশ রক্ষায় অরণ্য
"জীবন সুন্দর হয়, পরিবেশ গুণে,
মানুষ মানুষ হয়, পরিবেশ জ্ঞানে।"
পরিবেশ ও পৃথিবী :
আমাদের চারদিকে প্রাকৃতিক ও মানবিক প্রেক্ষাপটই হল পরিবেশ। গাছপালা, নদীনালা, কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে মানুষ, সকলেই সেই পরিবেশের শরিক। এর মধ্যেই জীবনের সৃষ্টি-বিস্তার-পরিণাম। সেই কারণেই মানবজীবনে প্রকৃতির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
মাধুরীড়ির ভারসাম্য :
আমাদের এই পরিবেশ কোনো বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। এটি পারস্পরিক সহযোগিতার নিবিড় সূত্রে বাঁধা একটির সহযোগিতা না থাকলে অপরটি পঙ্গু বৈজ্ঞানিকরা এই বিচিত্র সহযোগিতার নাম দিয়েছেন, 'বাস্তুরীতি'। এই 'খাস্তুরীতির' সূত্রে পৃথিবীর আবহমণ্ডল, তার বায়ুস্তর, তার পাহাড়-নদী-সাগর-মহাসাগর, মরুভূমি এবং তার অরণ্যানী যেমন আছে, তেমনি আছে এই পৃথিবীর তাবৎ জীব ও প্রাণীরা। 'বাস্তুরীতির' ভারসাম্য বিঘ্নিত হলেই সর্বনাশ-সমগ্র পরিবেশ বিষময় হয়ে উঠবে।
বায়ুস্তর ও আবহমণ্ডল :
পৃথিবীর বায়ুস্তর হল আমাদের মায়ের আঁচলের মতো। মহাকাশের নানান ঝামেলা থেকে এই বায়ুস্তর বরাবর আমাদরে বাঁচিয়ে আসছে। মহাজাগতিক ভয়ংকর উয়তা এবং শৈত্যও বায়ুস্তরে আটকে যায়। বায়ুস্তরের উপর দিকে রয়েছে 'ওজোন', ওই ওজোন স্তর আটকে দেয় মহাজাগতিক অতি-বেগুনি রশ্মি। তাই পৃথিবীর টিকে থাকবার পক্ষে এই বায়ুস্তর খুবই জরুরি। এত গেল বাইরের দিক, পৃথিবীর ভেতরেও এই বায়ুস্তরের আর একটি রূপ আমরা দেখি। এই বাতাস-সমুদ্র আমাদের পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে রেখেছে। তৈরি করেছে সুন্দর এক আবহমণ্ডল। এই বাতাসের জন্যই শীত বা গরম তেমন চরম হয়ে পৃথিবীর বুকে দেখা যায় না। পৃথিবীতে ঋতু পরিবর্তন হয়।
অরণ্যের প্রয়োজন :
এই যে বায়ুস্তর, আবহমণ্ডল এবং পরিবেশের কথা বলা হল, যা পৃথিবীকে মানুষের এবং জীবজগতের বাসযোগ্য করেছে, তাকে ঠিকমতো বজায় রাখতে যে সহযোগিতা করছে সে হল অরণ্য। এই পৃথিবীর সুবিস্তীর্ণ অরণ্যভূমি তার পরিসেবা দিয়ে এই পৃথিবীকে তার পরিবশে-সহ বাঁচিয়ে রেখেছে। এই পৃথিবীতে জীব সৃষ্টি সম্ভব হত না, যদি না পৃথিবীর আদি সৃষ্টির যুগে গাছপালা না থাকত। অরণ্য আছে বলেই এই পৃথিবী আজও সবুজ রয়েছে। অরণ্য আছে বলেই অন্ন-রিক্তা বসুন্ধরার ভয়ংকর রূপ আমরা দেখতে পাই না। অরণ্য আছে বলেই আকাশ মেঘে ছায়া, বৃষ্টি নামে, নদী-নালা ভরে যায় জলে। অরণ্য আছে বলেই এই পৃথিবীতে সভ্যতার বিকাশ হয়েছে। পৃথিবীতে সামগ্রিকভাবে পরিবেশ পরিসেবায় অরণ্যের ভূমিকা অসাধারণ।
অরণ্যের পরিসেবা :
ভারতে অরণ্যভূমি থাকলেও তা যথেষ্ট নয়। মাত্র ২২.৭ শতাংশ জমিতে অরণ্য আছে। প্রয়োজন আরও ৭.৩ শতাংশ অরণ্যভূমি। না হলে ভারতের আবহমণ্ডলের ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। ফলে শুকিয়ে যাবে শস্যভূমি।
ভারতে অরণ্যভূমি :
অতীতে আমাদের এই ভারতবর্ষের এমন অবস্থা কিন্তু ছিল না। ভারতীয় সভ্যতা 'আরণ্যক' পরিবেশের মধ্যেই বিকাশলাভ করেছিল। এখানেই প্রথম 'সামগান' রচিত হয়েছিল। তপোবনে প্রচলিত হয়েছিল বিদ্যাশিক্ষার পাঠশালা।
পরিবেশ পরিসেবায় অরণ্য :
পরিবেশ পরিসেবায় অরণ্য কেবল 'ইকোলজিক্যাল' ভারসাম্য আনে না-আমাদের দেহ ও মন উভয়কেই গড়ে তোলে অরণ্য। অরণ্য তাই প্রাণমন্ত্র, সুস্থতার চাবিকাঠি। তাই অরণ্য সংহার আত্মহননেরই শামিল। এর ফলে শরীর ও মন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
উপসংহার :
'পরিবেশ' কোনো একটি বিচ্ছিন্ন ব্যাপার নয়। এটি হল একটি সামগ্রিক সহযোগিতার নাম। আর এই সহযোগিতায় প্রধান ভূমিকা হল অরণ্যের। এটিই হল পরিবেশ-পরিসেবার মূল শিকড়। এটিকে সর্বতোভাবে রক্ষা করার শপথ নিতে হবে।
আরও পড়ুন-