প্রকৃতির অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ প্রকৃতির অভিশাপ ”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
প্রকৃতির অভিশাপ বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Prakrtira Abhisapa Bengali Grammar Class-10
প্রকৃতির অভিশাপ
"বিজ্ঞানে অজ্ঞান তুই করে যাস্ ভুল,
প্রকৃতি রহস্যময়ী নাই তার কুল।
ভাঙাগড়া তার লীলা, স্থিতিলয় তার খেলা,
মানুষ তাহার হাতে খেলার পুতুল।”
ভূমিকা :
অনন্ত শক্তিময়ী প্রকৃতির দু'টি রূপ-একটি শান্ত স্নিগ্ধ, অপরটি রুদ্রের মতো প্রলয়ংকর। একদিকে দাক্ষিণ্য, তারই পাশে সংহার মূর্তি। একরূপে সে শুভদা, অন্যরূপে সংহারকারিণী। প্রকৃতির প্রকৃতি মিশ্রিত 'ললিতে-কঠোরে'। কখনও তার মধ্যে সৃষ্টিসুখের উল্লাস, কখনও-বা ধ্বংসের তান্ডব। 'ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ'। বিশ্বপ্রকৃতির এই লীলা বোঝা অসম্ভব। আদিম কাল থেকে আজও প্রকৃতি তাই রহস্যময়ী।
প্রকৃতিকে নিয়ন্ত্রণ :
প্রকৃতিকে শাসন করে মানবসভ্যতার বিজয়যাত্রা সূচিত হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দ্বারা মানুষ আজও প্রকৃতিকে অনেকটাই নিজের আয়ত্তে এনে ফেলেছে। অগম্য পাহাড় কেটে সে তৈরি করেছে পথ, নদীর জলধারাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে বাঁধের বন্ধনে, ঊষর মরুর বুকে ফুটিয়ে তুলেছে সবুজের সমারোহ। তবু প্রকৃতির খামখেয়ালির কাছে মানুষ আজও অসহায়। প্রকৃতি তার নিজের খেয়ালে ধ্বংসলীলা চালিয়ে যাচ্ছে। কখন যে প্রকৃতি কুপিত হবে, কখন যে মারণ-অস্ত্র নিক্ষেপ করবে তা বোঝা বিজ্ঞানেরও অসাধ্য।
প্রকৃতির রুদ্ররূপ :
'খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে, বিরাট শিশু আনমনে',-বিরাট প্রকৃতি শিশুর এই খেলার মধ্যেও এই বিশ্বে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা চলে তার পরিচিত সুখ-দুঃখ নিয়ে। কিন্তু মাঝে মাঝে জীবনের 'তানপুরাটার তার' প্রকৃতির খেয়ালে ছিন্ন হয়ে যায়। মানবজীবনের স্বাভাবিক ছন্দে প্রকৃতি বারে বারে আঘাত হানে এবং তছনছ করে দেয় সভ্যতার নানান কীর্তিকে।
প্রকৃতির অভিশাপ :
কোনো এক বিস্মৃত অতীতে অনন্ত অসীম জলের ভিতর থেকে আমাদের এই ভূমিখণ্ডের জন্ম হয়েছিল। তারপর থেকেই এই ভূমিখণ্ডের ওপরে মাঝে মাঝে নেমে আসছে প্রকৃতির সর্বনাশা অভিশাপ। কখনও সে বন্যারূপে দিগ্বিদিক প্লাবিত করে, কখনও উর্বরাভূমি খরায় জ্বালিয়ে নীরস মরুতে পরিণত করে, আবার কখনও-বা বিধ্বংসী ভূমিকম্প মুহূর্তের মধ্যে তাসের ঘরের মতো ধ্বংস করে দেয় মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার স্বপ্ন-সৌধ। বন্যা, খরা, সাইক্লোন, ভূমিকম্প, ধস, সুনামি-প্রকৃতির এইসব বিপর্যয় একপলকে ছিনিয়ে নেয় কত প্রাণ ও সম্পত্তি।
খেয়ালি প্রকৃতি ও ভারতের সমস্যা :
প্রতিবছরই গড়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের শিকার হয় প্রায় ৬ কোটি মানুষ, প্রাণ হারায় গড়ে ৩৫০০ জন। ভারতেও প্রতিবছর বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পে লক্ষ লক্ষ মানুষ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে বন্যা ও ভূমিকম্পে প্রতিবছর ভারতবর্ষে বহু প্রাণ ও সম্পদহানি হয়। মানুষ কিন্তু প্রকৃতির কাছে বারংবার পরাজিত হয়েও দমে না। ধ্বংসের মধ্যে নবজীবনের বেদি সে রচনা করে। তার ধৈর্য, বুদ্ধি, প্রযুক্তিগত বিদ্যাকে অবলম্বন করে প্রাকৃতিক অভিশাপের মোকাবিলায় সে প্রস্তুত হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে বিশ্বের জনগণকে রক্ষা করতে চাই প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন প্রকল্প।
প্রকৃতিকে জয় করা :
প্রকৃতির রুদ্রতাণ্ডব প্রতিহত করার উপায় হল, মানুষকে সচেতন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকলের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণ, খরা দূরীকরণে সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন, ভূমিকম্প ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশেষ ধরনের গৃহ নির্মাণ প্রভৃতি উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ :
মানবজীবন, সম্পত্তি এবং পরিবেশের ওপর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের বিরূপ প্রভাব এবং ঘটনাবলি হ্রাসের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাদি গ্রহণ করতে চলতি দশকটিকে 'আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ দশক' হিসেবে চিহ্নিত করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা। এই দশকের প্রতি বছর অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় বুধবারটি পালিত হবে 'বিশ্ব বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ দিবস' হিসেবে। বিশ্ববোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাই যদি এগিয়ে আসে-তাহলে বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে না।
আরও পড়ুন-