উন্নয়ন ও পরিবেশ বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “ উন্নয়ন ও পরিবেশ ”প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
উন্নয়ন ও পরিবেশ বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Unnayana O Paribesh Class-10
উন্নয়ন ও পরিবেশ
ভূমিকা :
বিবর্তনের পথে মানবসভ্যতার গতিশীলতার রথ দুপাশের পরিবেশকে করে তুলেছে ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপন্ন। কিন্তু তা বলে সভ্যতার উন্নয়নের গতিকেও স্তব্ধ করা যায় না। তাই উন্নয়ন পরিচালনার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের উপর বর্তায় প্রধান ভূমিকা। বিভিন্ন সুসংগঠিত পরিকল্পনার সাহায্যে রাষ্ট্রকে এই রথ যথাযথভাবে পরিচালনা করতে হবে। কেননা উন্নয়নের সঙ্গে পরিবেশও সম্পৃক্ত।
আমরা জানি পরিবেশকে কেন্দ্র করেই উন্নয়ন সংঘটিত হয়। আর ব্যাপক অর্থে পরিবেশ বলতে বোঝায় প্রকৃতি, মানুষ ও জীবজন্তুসহ সমগ্র পৃথিবী। এ ছাড়াও বর্তমানে সামাজিক ও মানসিক পরিবেশকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এবং বৃহত্তর পৃথিবীর সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানের কথা চিন্তা করে আজকের যুগে সব রাষ্ট্রই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখে। কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটিয়ে সমস্ত দিকেই উন্নতির পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়। কিন্তু এই উন্নয়নের ফলে দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, অনেক সময়েই সে দিকে দৃষ্টি থাকে না।
আমাদের ভারতবর্ষ কৃষিকেন্দ্রিক দেশ। সুতরাং বিশাল জনসংখ্যার চাহিদা পূরণের জন্য কৃষিক্ষেত্রে উন্নতি অপরিহার্য। এখন জমিতে বারো মাস চাষ করা হয়। ফলে রাসায়নিক সার প্রয়োগ, কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার এবং ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলন-এই সমস্ত দিকেই নজর দিতে হয়। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবেশ। জমির উর্বরতা বৃদ্ধির জন্য রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ওষুধের ব্যবহার মাটি এবং জীবকুল সকলেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ভূগর্ভস্থ জল উত্তোলনের ফলে জলস্তর যেমন নেমে যায়, তেমনই আশঙ্কা দেখা দেয় ভূমিকম্পের।
কৃষির পরেই আধুনিক যুগে প্রয়োজন শিল্পের প্রসার। শিল্পের প্রসারের ফলে দেশে বেকার সমস্যার সমাধান, বিদেশি মুদ্রা আমদানি অর্থাৎ এককথায় বলা যায় দেশের অর্থনৈতিক কাঠামো উন্নত হয়। কিন্তু প্রদীপের নীচে যেমন অন্ধকার থাকে, ঠিক তেমনই শিল্পের উন্নতি পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকারকও বটে। বড়ো, মাঝারি এবং ছোটো শিল্পে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে এবং বড়ো বড়ো কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীতে পতিত হওয়ার ফলে নদী ও সমুদ্রের জল দূষিত হয়। মানুষ ও জলজ প্রাণীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়া কলকারখানার ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলকেও দূষিত করে।
যানবাহনের বৃদ্ধি, নতুন নতুন রাস্তা নির্মাণের ফলে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাস্তা নির্মাণের জন্য হাজার হাজার গাছ কাটা হলেও, সে পরিমাণ বৃক্ষ লাগানো সম্ভব নয়। গাড়ির ধোঁয়া বায়ুমণ্ডলে দূষণ বাড়ায়। জলে ইঞ্জিনবাহিত নৌকা এবং জাহাজ চলার ফলে জলদূষণের সৃষ্টি হয়। ফলে জলজ প্রাণীদের জীবনযাত্রা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতি পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদিত বর্জ্য পদার্থ জলে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। আধুনিক পরমাণু গবেষণাও পরিবেশের ক্ষতির কারণ। এ ছাড়া মহাকাশে মহাকাশ যানের উৎক্ষেপণে দূষণের কথা বলাই বাহুল্য। উত্তর মেরুতে নানা দেশের নানা অভিযান ও গবেষণাগার স্থাপনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানকার জলবায়ু। এ ছাড়া অভিযাত্রীরা তাদের অভিযানের ফলে অব্যবহার্য জিনিস সেখানেই পরিত্যাগ করে আসায় মেরু অঞ্চলে এবং পাহাড় অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পরিবেশ।
উপসংহার :
বর্তমান মানব সভ্যতার অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে গেলে উন্নয়ন অপরিহার্য। কিন্তু উন্নয়নের সঙ্গে পরিবর্তনের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। বৈজ্ঞানিকরা পরিবেশ-বান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে উভয় দিকে সামঞ্জস্য বিধান করে অগ্রসর হলে,ক তবেই পৃথিবী তথা মানুষের প্রকৃত উন্নয়ন তার সুদূরপ্রসারী চেহারাকে মেলে ধরবে।
আরও পড়ুন-