বিশ্বকাপ ক্রিকেট-2023 বাংলা প্রবন্ধ রচনা
বিশ্বকাপ ক্রিকেট 2023 প্রতিবেদন রচনা : পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০২৩” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট- ২০২৩ বাংলা প্রবন্ধ রচনা || World Cup Cricket- 2023 || বিশ্বকাপ ক্রিকেট 2023 প্রতিবেদন রচনা
বিশ্বকাপ ক্রিকেট-২০২৩
ভূমিকা :
আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে খুব একটা সমাদৃত না হলেও, ক্রিকেট ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ভারতের জাতীয় ভাবাবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে। তাই ছোটো-বড়ো বিভিন্ন টুর্নামেন্টে যেখানেই ভারত অংশগ্রহণ করে সেখানেই সারা দেশবাসী একত্রিত হয়ে দেশের জয় প্রার্থনা করে। আর চার বছর অন্তর বিশ্বকাপের সময় ভারতবাসীর পাথেয় হয়ে ওঠে ক্রিকেট। পথে-ঘাটে-বৈঠকখানায় সকলের আলোচনার বিষয় জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের ভুল, ত্রুটি এবং সাফলা। এই ধরনের উত্তেজনা এবং আগ্রহের বাতাবরণের মধ্যেই এবারের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর অনুষ্ঠিত হল। এবারকার ২০২৩ বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতাটি ১৩তম আসর। আয়োজক দেশ ছিল ভারত।
অতীত ইতিহাস:
১৯৮৩ সালে ২৫ জুন লর্ডসের ফাইনালে প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে ভারত ফাইনালে জেতার পরদিন ‘দ্য টাইমস’ তো লিখেছিল ‘কামানের খাদ্য যখন নিজেরাই কামানে পরিণত হল! কপিল দেবের হাত ধরে ভারত জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করেছিল। সেই দিন ভারতবাসী আনন্দে আলোর রোশনাই ছড়িয়ে নূতন করে দেওয়ালি ঊ্ৎসবে মেতে উঠেছিল। ২০১১-তে শ্রীলঙ্কাকে পরাজিত করে ভারত মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে ক্রিকেটে বিশ্বকাপ জয় করে শ্রেষ্ঠ দল হিসাবে নিজেদের বিশ্ব ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত করে। ২০১১-তে ভারতের দ্বিতীয়বার বিশ্বকাপ জয় হয়েছিল।
প্রতিযোগিতার রূপরেখা :
মোট ১০টি দেশ এই বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় এবং এই দলগুলি ছিল- ভারত, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান এবং দক্ষিণ আফ্রিকা।
ভারতের কর্মকাণ্ড :
২০১১-তে ভারত বিশ্বকাপ জয় করেছিল। এবারেও তারা সেই সম্মান ধরে রাখতে চেয়েছিল। ভারত পুল-বি-এর সব কয়টি দলকেই একনাগাড়ে পরাজিত করে পুল-বি-এর শীর্ষস্থান লাভ করে। এরপর কোয়াটার ফাইনালে তারা বাংলাদেশকে পরাজিত করে। এইভাবে ভারত পর পর ৭টি ম্যাচে জয়লাভ করায় দেশবাসী ফের একবার বিশ্বজয়ের আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু আত্মবিশ্বাসী ভারত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার তারুণ্য ও দলগত সংহতির কাছে পর্যুদস্ত হয়। তবে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটীয় দক্ষতা যে বিশ্বে সবার উপরে সে কথা স্বীকার করতে কোনো গ্লানি নেই।
ভারতের বিশ্বকাপ দল গঠন :
রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), শুভমান গিল, বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার, ঈশান কিষাণ, কেএল রাহুল, হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), সূর্যকুমার যাদব, রবীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, শার্দুল ঠাকুর, জাসপ্রিত বুমরাহ, মো. শামী, মো. সিরাজ, কুলদীপ যাদব।
খেলার নিয়ম :
বিশ্বকাপ ২০২৩-এ, দশটি দল অংশগ্রহন করবে। কোনও গ্রুপ থাকবে না। সমস্ত দল একটি রাউন্ড-রবিন পর্যায়ে নিযুক্ত হবে, যেখানে তারা একে অপরের মুখোমুখি হবে। এর মানে হল যে প্রতিটি দল মোট নয়টি ম্যাচ খেলবে, অন্য নয়টি দলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। এই পর্বে মোট 45টি ম্যাচ থাকবে। রাউন্ড-রবিন পর্বের পর, শীর্ষ চার দল সরাসরি সেমিফাইনালে যাবে। প্রথম সেমিফাইনালে, প্রথম স্থান অধিকারী দল চতুর্থ স্থান অধিকারী দলের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে এবং দ্বিতীয় সেমিফাইনালে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে থাকা দলগুলো মুখোমুখি হবে।
স্থান এবং সময়কাল:
বিশ্বকাপের সমস্ত 48টি ম্যাচ 10টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ভারত তাদের ম্যাচগুলি খেলেছিল চেন্নাই, দিল্লি, আহমেদাবাদ, পুনে, ধর্মশালা, লখনউ, মুম্বাই, কলকাতা, বেঙ্গালুরু এবং আহমেদাবাদে। 5ই অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে যা 19শে নভেম্বর, 2023 পর্যন্ত চলেছিল।
ফলাফল:
রবিবার আমদাবাদে বিশ্বকাপ ২০২৩-এর ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া টস জিতে ভারতকে ব্যাট করতে পাঠায়। সেইমতো খেলার শুরুতে ব্যাট করতে নামে ভারত। তারা নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২৪০ রানে অল-আউট হয়ে যায়। পালটা ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ৪৩ ওভারে ৪ উইকেটের বিনিময়ে ২৪১ রান তুলে ম্যাচ জিতে যায়। ৪২ বল বাকি থাকতে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে ষষ্ঠবার ওয়ান ডে বিশ্বকাপের খেতাব ঘরে তোলে অস্ট্রেলিয়া।
ভারতবাসীর আবেগ :
দিনটা ছিল রবিবার। সকাল থেকেই বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ব্যস্ত ছিল খেলাটা কে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য ।কোন কোন ভিআইপি খেলা দেখতে আসবেন, ভারতীয় বিমান বাহিনী কেমন ভূমিকা হবে ইত্যাদি নিয়ে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজের স্বয়ং উপস্থিত থেকে এ খেলা দেখেছিলেন। এছাড়াও ছিলেন অতীতে বিশ্বকাপ জয়ী ২ ক্যাপ্টেন কপিল দেব এবং মহেন্দ্র সিং ধোনি। অফিস আদালত বন্ধ থাকায় মানুষ ঐদিন খেলা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল ।কেউ টিভির পর্দায় । কেউ মোবাইলে এই খেলা উপভোগ করেছিল। গ্যালারিতে তিল ধারণের জায়গা ছিল না। খেলার মাঠের বাইরে বড়ো বড়ো পর্দায় অনেকেই খেলা দেখেছিল। নিজের দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জয় কে খুব আনন্দের সঙ্গে উপভোগ করেছিল। ট্রেনে বাসে চায়ের দোকানে সর্বোত্তরই খেলার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল।খেলায় ভারতের পরাজয় ভারতবাসী র মনে শোকের ছায়া নেমে আসে।
উপসংহার:
প্রত্যেক খেলায় যেমন জয় আছে তেমনি পরাজয় আছে। পরাজয়ের ব্যর্থতা শিক্ষা জয়ের পথকে সুগম করে ।এত ভালো খেলা করে ভারত যে পরাজয় গ্রহণ করেছে। একদিন হয়তো ভারত ক্রিকেট বিশ্বকাপে শ্রেষ্ঠ আসন গ্রহণ করবে । একটা দেশ একটা দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে ক্রিকেট বিশ্বকাপের হাত ধরে।
আরও পড়ুন-