একটি নির্জন দুপুর বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত "একটি নির্জন দুপুর" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি নির্জন দুপুর বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekati Nirjan Dupur Bangla Prabandha Rachana
একটি নির্জন দুপুর
"নীরব মধ্যাহ্ন বেলা,-শব্দহীন নিঃসাড় ভুবন, -
কেহ কোথা নাই-
অকস্মাৎ মর্মরিল তরুশাখে মন্থর পবন
চমকিয়া চাই।” (হুমায়ুন কবির)
ভূমিকা :
নির্জন কোনো দুপুরের কথা ভাবতে গেলে, এই ছবিটাই আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। কবি যখন এই কবিতা লিখেছিলেন, তখনও শহরে ও গ্রামে ছিল দীর্ঘ দুপুরের নিস্তব্ধতা, ছিল নির্জনতা, ছিল পাখির ডাক। কালের ব্যবধানে আজ ওই দুপুর থাকলেও, তার নির্জনতা নিঃশব্দে হয়ে গেছে অদৃশ্য। কোথায় যেন হারিয়ে গেছে দ্বিপ্রহরের নিস্তব্ধতা, কোলাহলে মুখর হয়ে উঠেছে স্তব্ধ দুপুরের মুহূর্তগুলি।
নির্জনতা নেই :
গ্রামে-গঞ্জে শহরে-নগরে এখন হই-হট্টগোল খুবই বেড়ে গেছে। শহর কলকাতা কোনো সময়ের জন্যই এখানে নিস্তব্ধ থাকে না। ভারী ভারী ট্রাক বিকট শব্দ করে ছুটে চলেছে শহরের পথে পথে। ছুটছে তীক্ষ্ণ হর্নের আওয়াজ তুলে দৈত্যাকার বাসগুলি। কোলাহল উঠছে পদাতিক জনস্রোতের ভেতর থেকেও। শান্ত, নীরব, নির্জনতা শহর কলকাতায় আজ আর দেখা যায় না। তা কেবল কলকাতাই বা কেন, মফস্সল শহরেরও এই একই হাল।
নির্জনতার স্বরূপ :
নির্জন একটি দুপুরের খোঁজে যদি আমরা গ্রামে গিয়ে হাজির হই, সেখানেও তেমনি নির্জন দুপুর আমরা পাই না। ধু-ধু মাঠ, খাঁ-খাঁ দুপুর, চিলের ডাক, শাঁ-শাঁ বাতাস ইত্যাদিও ইদানীং দুর্লভ হয়ে গেছে পল্লি-পরিবেশে। যে নিবিড় সবুজ ছোটো ছোটো গ্রামে কোকিলের কুহুরব, ঘুঘুর ডাক কিংবা টিয়াপাখির ট্যা ট্যা শোনা যেত, এখন তা নেই। শোনা যায় না উদাস বাঁশির সুর। নির্জন দুপুর হঠাৎ যেন আমাদের মনকে হতাশ করে দিয়ে হারিয়ে গেছে।
দুপুরের নির্জনতা :
গ্রীষ্মের দুপুর একরকম, শীতের দুপুর অন্য রকম। শরতের দুপুরে সাদা মেঘের ভেলা দেখতে দেখতে মনের ভেতর যে আনন্দ ও আবেগের লহর ওঠে, বসন্তকালের দুপুরে ঠিক তেমনটি হয় না। বসন্তের দুপুরে শোনা যায় ভ্রমরের গুঞ্জন, নানারকম ফুলের সৌরভ এবং বসন্তসখা কোকিলের কুহুতান, মুখরিত বাতাসের ছোঁয়ায় দেহ-মনে রোমাঞ্চ জাগে। বর্ষা ঋতুর দুপুর দেখা দেয় বৃষ্টির চাদর গায়ে দিয়ে। শোনা যায়, মৃদু মৃদু মেঘ গর্জন। বর্ষার দুপুর বেশ নির্জন, রিমঝিম বৃষ্টির সংগীতে যে-সময় মন হয়ে যায় উদাস।
নির্জনতার কাব্যিক অনুভব :
দুপুর যে ঋতুরই হোক না কেন, তার ভেতর কেমন যেন এক মন কেমন-করা নির্জনতা আছে। আছে বেশ একটি আলগা অবকাশ। রবীন্দ্রনাথের 'ডাকঘরের' অমল জানিয়েছিল, দুপুর বেলা সে শুনতে পায় প্রহরীর ঘণ্টা। সেই ঘণ্টাধ্বনি জানিয়ে দেয় সময় বসে নেই, সময় কেবলই বয়ে যাচ্ছে। আর অমল একা জানলার ধারে বসে বহমান সময়ের সঙ্গে কথা বলে যায়।
নিজের শৈশবের স্মৃতিতেও রবীন্দ্রনাথ এই রকমই এক ছবি এঁকেছেন, যখন তিনি দুপুরের নির্জনতায় ছাদে উঠে একান্ত নির্জনে শহর কলকাতার ভিন্নতর এক ছবি দেখতেন। মাথার ওপর আকাশব্যাপী খরদীপ্তি, তারই দূরতম প্রান্ত হতে চিলের সূক্ষ্ম তীক্ষ্ণ ডাক পৌঁছাত কিশোর রবীন্দ্রনাথের কানে। গলির ভেতর শোনা যেত ফেরিওয়ালার ডাক। সেই নিস্তব্ধ নির্জন দুপুরে কিশোর কবির মন কেমন যেন উদাস হয়ে যেত। মনের ভেতর কেমন যেন জাগত ব্যাকুলতা।
উপসংহার :
সেই পুরোনো পরিবেশ এখন নেই। তা সেই পরিবেশ না থাকুক, প্রতিটি ঋতুর হাত ধরেই আমাদের কাছে এসে আজও হাজির হয়, মন কেমন-করা উদাস নির্জন দুপুরগুলি। ডাকঘরের অমল যে ঘণ্টাধ্বনি শুনেছিল, তা আজও বেজে চলেছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হয়, সময় বসে নেই, সময় চলে যাচ্ছে। ছুটির দিনে নিঃসঙ্গ দ্বিপ্রহর আজও হাতছানি দেয়। দুপুরের মুহূর্তগুলি তখন অন্তরঙ্গ হয়ে ধরা দেয়। সেই স্মৃতিমেদুর দুপুরগুলির মতো মধুর আর কী-ই বা আছে।
আরও পড়ুন-