তোমার জীবনে একটি খুশির দিন বাংলা রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে।
এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত " তোমার জীবনে একটি খুশির দিন" প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
তোমার জীবনে একটি খুশির দিন বাংলা রচনা || Tomara Jibane Ekati khusira Din
তোমার জীবনে একটি খুশির দিন
ভূমিকা :
জীবনের পথে চলতে কোনো একটি দিন বিশেষ দিন হয়ে ওঠে, যে দিনটি অন্য দিনগুলোর ভিড়ে হারিয়ে যায় না। জীবনটা একটানা সুখ বা দুঃখের নয়-হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনার, মেঘরৌদ্রের খেলা চলে এ জীবনে। এর মধ্যেই একটা কী সুর মনের কোণে গুনগুন করতে থাকে। জীবনটা অন্যরকম মনে হয়, জীবনের বোধটা পালটে যায়। তখন বঙ্কিমচন্দ্রের মতো মনে হয় না-'এ জীবন লইয়া কী করিব, কী করিতে হয়?' তখন মনে হয়-'মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে।'
যে দিনটা আমার খুব মনে পড়ে :
সেদিন বৈশাখের এক রৌদ্রদগ্ধ দিন। পড়ন্ত আকাশ জুড়ে কালবৈশাখী মেঘের ধুমল ছায়া। চারদিকে এক বিষাদের কালিমা যেন ছড়িয়ে আছে। এক অদ্ভুত নীরবতা প্রকৃতি ও জীবজগতে। বাড়ি আমার রূপনারায়ণ নদীর খেয়াঘাটের ধারে। ধূসর মেঘ নদীর জলে মুখ দেখছে। নিত্যদিনের মতো খেয়ানৌকায় মানুষ এপার-ওপার করছে। হঠাৎ ঝড়ের তাণ্ডব শুরু হল। রূপনারায়ণের শান্তরূপ মুহূর্তের মধ্যে ভয়ংকর হয়ে উঠল। মাঝনদীতে খেয়ানৌকার মাঝি অসহায় হয়ে পড়ল। বৃষ্টির ধারা নামল অঝোরে। উদ্দাম ঝড়ের তাণ্ডবে দেখলাম, খেয়ানৌকাটি ডুবে গেল।
আমি দিশেহারা হয়ে পড়লাম। আমি কালবিলম্ব না করে ওই ঝড়ের মধ্যে ছুটে গেলাম আমার বাড়ির অনতিদূরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে। তারা খবর পাওয়ামাত্র তাদের স্পিড বোট নিয়ে উদ্ধারকার্যে ঝাঁপিয়ে পড়ল। আমিও তাদের সঙ্গে থেকে যথাসাধ্য সাহায্য করলাম। মানুষগুলিকে যখন তীরে আনা হল, তখন তাদের মৃতপ্রায় অবস্থা। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে তাদের সেবাশুশ্রুষা করে সুস্থ করে তুললাম। তাদের কৃতজ্ঞতা, আশীর্বাদ ও শুভকামনায় আমি সেদিন হারিয়ে গিয়েছিলাম। সেদিন অতগুলো মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে আমার হৃদয় খুশিতে ভরে গিয়েছিল।
নৌকা-ডোবার সেই মুহূর্তে আমি যদি না দেখতাম হয়তো সবার অজান্তে এতগুলো মানুষ সলিল সমাধি লাভ করত। এতগুলো মানুষের জীবনদাতা হতে পেরে আমার যে কী গর্ব হল, তা কী করে বলব। মানুষের জন্য কিছু করতে পারার আনন্দ আর কী আছে। কালবৈশাখী ঝড় আরও কত দিন আকাশকে ঢেকে ফেলবে, রূপনারায়ণের জলে কালো মেঘের ভ্রুকুটিভঙ্গিমা চলতে থাকবে, ওই ঘাটে খেয়ানৌকা আবার নতুন করে এপার-ওপার করবে-কিন্তু আমার মতো অন্য কেউ কি কোনোদিন আবার রূপনারায়ণের তীরে জেগে উঠবে? মানুষের কৃতজ্ঞতায় আর কারও জীবন-মন কি ভরে উঠবে কোনোদিন? হয়তো সময় তার জবাব দেবে।
উপসংহার :
ব্যক্তিসুখের সীমারেখায় যে সুখ তার হদিশ অন্য কেউ পায় না, শুধু মন তার সন্ধান পায়। তা একান্ত ব্যক্তিগত, তাই তার অসীমতা নেই। কিন্তু ব্যক্তিসীমার বাইরে যে সুখের অবস্থান, তার তো সীমা-পরিসীমা নেই। হৃদয় থেকে হৃদয়ে যে সুখের উৎসার তা তো অনির্বচনীয়তায় ভরপুর। তাই কবিগুরুর কথায় বলা যায়-
"আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া
বুকের মাঝে বিশ্বলোকের পাবি সাড়া।
আরও পড়ুন-