একটি উৎসবের স্মৃতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা
পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের বর্তমান পাঠক্রম অনুযায়ী মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা পরীক্ষায় একটি করে প্রবন্ধ রচনা প্রশ্নপত্রে এসেই থাকে। শব্দসীমা ৫০০ এবং পূর্ণমান ১০। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে কোনো উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে না কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকে উত্তরসংকেত দেওয়া থাকে। এই নমুনা বাংলা প্রবন্ধরচনা ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য সঠিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে সাহায্য করবে আমরা মধ্য বিভাগের সকল শ্রেনীর বিষয়ভিত্তিক প্রশ্ন ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রদান করবো। নতুন নতুন প্রশ্ন পেতে নিয়মিত আমাদের Website টি Follow করো। যাইহোক, বর্তমান পোস্টে প্রকাশিত “একটি উৎসবের স্মৃতি” প্রবন্ধটি মূলত মাধ্যমিকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
একটি উৎসবের স্মৃতি বাংলা প্রবন্ধ রচনা || Ekti Utsav Smrti Bangla Prabandha Rachana
একটি উৎসবের স্মৃতি
"উৎসব মানে এক মিলনের মেলা,
কিছু দেওয়া, কিছু নেওয়া, জীবনের খেলা।"
উৎসবের ভূমিকা :
উৎসবপ্রিয় বাঙালি জাতির উৎসবের শেষ নেই। আমাদের 'বারো মাসে তেরো পার্বণ।' এর কিছু সামাজিক উৎসব, কিছু ধর্মীয় উৎসব। নির্ভেজাল সামাজিক উৎসব বলতে জন্মদিন পালন, বিবাহ উৎসব, নববর্ষ উদ্যাপন ইত্যাদিকে বোঝায়। এরকম একটি সামাজিক উৎসবের স্মৃতি আমার হৃদয়-মন জুড়ে আছে।
উৎসবের তাৎপর্য :
উৎসব আনন্দের উৎস। মানুষের গতানুগতিক জীবনযাত্রায় উৎসব নিয়ে আসে নতুন প্রাণের গতি। উৎসব তাই সবদেশে সবকালেই সমান প্রাসঙ্গিক। যে-কোনো উৎসবে বিভিন্ন শ্রেণির আবালবৃদ্ধবনিতা একসঙ্গে মিলিত হয়। উৎসবের দিনে দূর হয়ে যায় সর্বপ্রকার ভেদাভেদ। উৎসব দূরকে নিকট করে, অপরকে আপন। মানুষের জীবনের প্রয়োজন-ভেদে উৎসব নানা ধরনের হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণের উৎসবেরই প্রাথমিক লক্ষ্য আনন্দ উপভোগ ও মিলন। আমার গতানুগতিক জীবনধারায় এমনই একটি উৎসবের মুহূর্তে কিছু স্মৃতিকথা আজও মনে পড়ে।
বন্ধুর জন্মদিন :
উৎসবটি ছিল আমাদের এক বন্ধু নিখিলেশের জন্মদিনকে ঘিরে। নিখিলেশ হল আমাদের ক্লাসের সেরা ছাত্র। লেখাপড়ায় সে যেমন দুর্দান্ত, খেলাধুলাতেও সে কিছু কম নয়। সব দিক থেকেই সে ছিল সেরা। সারা মুখ জুড়ে সুন্দর একঝলক হাসি। বাইরের দিক থেকে দেখলে তাকে খুব সুখী বলেই মনে হত। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার ছিল বড়ো দুঃখ। সেই দুঃখের কথা কোনোদিন সে আমাদের বলেনি। তাই আমরা জানতামও না। যেদিন জানতে পারলাম, সেদিন তার জন্মদিনের উৎসব। সে পিতৃহীন। সময়টা ছিল শীতের শেষাশেষি। নিখিলেশ আমাদের জন্মদিনের উৎসবে নিমন্ত্রণ জানাল।
উৎসবের মাঝে: উপহার দেওয়া :
আমাদের সেক্শানের তিরিশ জন বন্ধু গেলাম ওদের বাড়ি, ছোট্ট বাড়ি। উৎসবে মাতোয়ারা। নিখিলেশের মা আমাদের খুব আদর করলেন। খুব খুশি তিনি। নিখিলেশের বোনটিও দাদার মতোই মিশুকে। দাদার জন্মদিনে সেও রৌ ভীষণ খুশি। এবারের জন্মদিনে নিখিলেশের মা তাকে উপহার দিয়েছেন নতুন একসেট বই। উমাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ভ্রমণকাহিনি। উপহার পেয়ে নিখিলেশ খুবই খুশি। ছোট্ট বোনটি দাদাকে উপহার দিয়েছে বিভূতিভূষণের 'চাঁদের পাহাড়'। নিখিলেশকেও আমরা উপহার দিলাম গানের ক্যাসেট, দিলাম রাশি রাশি ফুল। সন্ধ্যাবেলাটি ভরে উঠল গানে গানে। বাতাস ভারি হল ফুলের গন্ধে। মাঝে মাঝে নানাধরনের খাবার আসতে থাকল। হাসিতে, গানে আমরা ভরিয়ে তুললাম নিখিলেশের জন্মদিনের উৎসব। শেষে ভুরিভোজ করে বাড়ি ফিরলাম।
ফিরবার সময় নিখিলেশকে বিস্তর শুভেচ্ছা জানিয়ে বললাম, পরের বছর আবার ডাকিস। নিখিলেশ হাসতে হাসতে বলল, 'আসছে বছর তোমাদের নিমন্ত্রণ করা যাবে না। নিমন্ত্রণ করব আবার চার বছর পরে'। আমরা বললাম, 'চার বছর পরে?'-কেন?' সে হাসতে হাসতে বলল, 'কারণ একটাই, আমার জন্ম ২৯ ফেব্রুয়ারি।' হাসতে হাসতে কথাগুলি নিখিলেশ বলল বটে, কিন্তু তার অন্তরের গভীর থেকে বেরিয়ে এল একটি গভীর দীর্ঘশ্বাস, যা আমাদের কারও চোখ এড়াল না। আনন্দের মাঝে একটা করুণ উদাস সুর হৃদয়বীণার তারে ঝংকৃত হল। সেই সুর আজও বাজে, আর সঙ্গে সঙ্গে ভেসে ওঠে আমার মনের রুপোলি পর্দায় সেই উৎসবের বেদনা-মধুর স্মৃতি।
আরও পড়ুন-